মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এই ঘোষণা করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি এ দিন বলেন, ‘দলের সঙ্গে হুমায়ুন কবীরের কোনও সম্পর্ক থাকবে না। ধর্ম নিয়ে যাঁরা বিভাজনের রাজনীতি করেন, তাঁদের সঙ্গে দল কোনও সম্পর্ক রাখবে না। ধর্ম নিয়ে ঘৃণার রাজনীতি তৃণমূল বরদাস্ত করবে না।’ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান ফিরহাদ।
আগামী ৬ ডিসেম্বর বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’-এর শিলান্যাস করার কথা ঘোষণা করেছিলেন হুমায়ুন কবীর। তাঁর হুঙ্কার ছিল, সেই কাজে বাধা দিলে ৬ ডিসেম্বর রেজিনগর থেকে বহরমপুর পর্যন্ত জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও)-কেও হুমকি দিতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। হুমায়ুন বলেছিলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলতে আসবেন না। আপনি আমার কাজে বাধা দিচ্ছেন। যে দিন আপনার কলার ধরব, সে দিন আপনাকে কেউ রক্ষা করার জন্য কেউ থাকবে না।’
ওই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছিল বিজেপি। দলের বিধায়কের এই ধরনের মন্তব্যে তীব্র অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বও। এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করার উপরে জোর দেন। সেই জায়গায় এই ধরনের মন্তব্য দলীয় অবস্থানের পরিপন্থী।’
হুমায়ুনের এই মন্তব্যের পাল্টা সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। এই বিধায়কের মন্তব্যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে তিনি হুমায়ুন কবীরকে গ্রেপ্তার করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাজ্যকে একটি চিঠিও দেন বলে সূত্রের খবর। রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, হুমায়ুনের বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তাঁকে প্রিভেনটিভ অ্যারেস্ট করতে হবে। পাল্টা হুমায়ুন হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘রাজ্যপাল তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কথা বলছেন’।
এই সমস্ত মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় সেই সময়ে বৃহস্পতিবার তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। এ দিন দলের পক্ষ থেকে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘বাংলায় সব সম্প্রদায় এক হয়ে থাকে। এই ঐক্যই বাংলার সংস্কৃতি। তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষ দল। হঠাৎ দেখা গেল আমাদের এক সঙ্গী দাবি করলেন, তিনি বাবরি মসজিদ তৈরি করবেন। বাবরি মসজিদ বাবর তৈরি করেছিলেন অযোধ্যায়। তা বাংলায় কেন হবে? বাংলায় কেউ মন্দির বা মসজিদ তৈরি করলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু, মসজিদ তৈরি করা মানে হলো ধর্মান্ধতার দিকে ঠেলে দেওয়া। মসজিদ তৈরি করতে হলে, তা অন্য কোনও নামে করা হলো না কেন!’
তিনি বিজেপিকে দুষে বলেন, ‘বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি খেলল। আমার বিশ্বাস বিজেপির নির্দেশেই হুমায়ুন এই কথা বলেছেন।’ অতীতে তিনবার দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি হুমায়ুনকে সতর্ক করেছিলেন বলে জানান ফিরহাদ। যদিও রাজ্যপালের বার্তার প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
তিনি ফিরহাদ হাকিমের সাংবাদিক বৈঠকের পাল্টা সরব হয়েছেন। হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমি ফিরহাদ হাকিমকে তৃণমূলের নেতা বলেই মানি না। তৃণমূলের নেতা হিসেবে আমি শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানি। তাঁরা আমাকে কিছু বলেননি। ববি হাকিম কী বলছেন, তার জবাব দেবো না।’