• প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির প্রমাণ নেই, প্রাইমারি নিয়োগে হাইকোর্টের মত! 'গোটা সিস্টেম বিসর্জন' দিতে চেয়ে তোলপাড় ফেলে দেওয়া অভিজিত্‍ গাঙ্গুলির রায় বাতিল হল কেন?
    ২৪ ঘন্টা | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অর্ণবাংশু নিয়োগী: ২০২৩-এর মে মাস। চাকরি বাতিল করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একধাক্কায় ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন,  তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। পরে ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দেয়। মামলা হওয়ার মাত্র ৮ মাস পরই এই নজিরবিহীন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিচারপতি নিজে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দুর্নীতির শিকড় খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫-এ সেই চাকরি বহাল রেখে সিঙ্গল বেঞ্চের একাধিক যুক্তিকেই খণ্ডন করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বৈধ ও বহাল থাকবে। বোর্ড বা রাজ্য সরকার চাইলে ভবিষ্যতের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনতে পারে, কিন্তু বর্তমান চাকরিগুলো ছাঁটাই করা যাবে না।

    তদন্তকারীরা যে তথ্য পেয়েছেন সেটা থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, নিযুক্ত প্রার্থীরা কোনও দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

    তদন্তের পর সিবিআই চিহ্নিত করে যে ২৬৪ জন প্রার্থীর ক্ষেত্রে অনিয়ম রয়েছে, যাদেরকে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। এছাড়াও, 'যোগ্যতা নম্বর' পেতে ব্যর্থ ৯৬ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং তাদেরও 'শনাক্ত করা হয়েছিল'। 

    পরবর্তীকালে, এই ৯৬ জন প্রার্থীকে চাকরি থেকে বাতিল করা হয়েছিল কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তারা এখনও চাকরিতে বহাল আছেন। এই ধরনের চিহ্নিতকরণের পরে, সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ স্থায়িত্বলাভ করে না এবং ৩২,০০০ শিক্ষকের নিয়োগে হস্তক্ষেপ করা যায় না।

    পরীক্ষায় গণ জালিয়াতির প্রমাণিত মামলা এবং অপ্রমাণিত দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে

    সিঙ্গেল বেঞ্চ আবেদনের বাইরে গিয়ে কোনও Apptitude Test হয়নি বলে অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করেছিল

    যখন দুর্নীতিতে সহায়তা করা বা মদত দেওয়ার অভিযোগে চাকরি বাতিল করা হয় তখন আদালতকে সন্তুষ্ট হতে হবে যে আদৌ বাতিল করার শর্ত পূরণ হয়েছে কিনা বা সেই পরিস্থিতি আছে কিনা।

    সুবিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতগুলিকে নিজের খেয়ালখুশি মতো নতুন নিয়ম বা বিধান সৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়।

    আদালত কোনও 'নাইট-এরান্ট'-এর মত শিরস্ত্রাণ পরতে পারেন না, যিনি নিজের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ান শুধুমাত্র নিজের কল্পিত সৌন্দর্য বা কল্পিত সদ্গুণের সন্ধানে।

    সমস্ত নিয়োগ বাতিল করার জন্য ব্যপক বা পদ্ধতিগত অনিয়মের সুস্পষ্ট প্রমাণ অপরিহার্য। পুরো পরীক্ষা বাতিল করতে হলে, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী রেকর্ডে উপস্থিত উপাদান দ্বারা পদ্ধতিগত ত্রুটির সম্ভাবনা প্রমাণিত হওয়া আবশ্যক। 

    প্রামাণ্য নথি থেকে পদ্ধতিগত সিস্টেম্যাটিক ফ্রড এর কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।  এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নিযুক্ত শিক্ষকদের চাকরির সময়কালে তাঁদের সততা বা দক্ষতা নিয়ে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। 

    এমন কোনও ঘটনা নেই যে পরীক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বেশি নম্বর দেওয়ার জন্য, বা যে প্রার্থীরা টাকা দিয়েছিল কেবল তাদেরই সাক্ষাৎকারে বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছিল।  

    একদল অকৃতকার্য প্রার্থীকে, পুরো ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়, বিশেষত যখন এটা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, এর ফলে অনেক নির্দোষ শিক্ষককেও মারাত্মক অপমান ও কলঙ্কের মুখোমুখি হতে হবে। কেবলমাত্র একটি চলমান ফৌজদারি মামলা চলছে বলে নিযুক্তদের চাকরিও বাতিল করা যায় না।

    উল্লেখযোগ্য, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিত্‍ গাঙ্গুলি যখন এই রায় দিয়েছিলেন, তখন তিনি কোনও রাজনৈতিক দল যোগ দেননি। তিনি শুধুই ছিলেন একজন আইনের রক্ষাকর্তা। কিন্তু ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপি যোগ দিয়েছিলেন। এরপর তিনি তমলুক কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং জয়লাভ করে সাংসদ (MP) হন। তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ তৈরি হওয়ার পর, স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে যে, তাহলে তখন কি তাঁর এই রায় ছিল সম্পূর্ণ অভিসন্ধিমূলক? রাজনৈতিক মহলে বিশেষত রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা এই প্রশ্ন তুলছেন।

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)