পুরুলিয়ায় মুছে যেতে পারে দেড় লাখেরও বেশি ভোটারের নাম! পর্যবেক্ষকের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক
প্রতিদিন | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার, পুরুলিয়া: জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১৫ জন ভোটারের। তার মধ্যে মৃত ভোটার ৮২ হাজার ২১০। স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরে গিয়েছেন ৫৯,৮১৬ জন। অন্য জায়গায় নাম রয়েছে ৪,৪২৬ জন, এছাড়া অন্যান্য রয়েছে।
এই জেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ২১ হাজার ৪৪২। এসআইআরের (SIR in Bengal) কাজ দেখতে গত মঙ্গলবারই পুরুলিয়ায় আসেন নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক দেবীপ্রসাদ করণম। বুধবার তিনি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনে জেলাশাসকের কনফারেন্স রুমে সর্বদলীয় বৈঠক করেন। সেই বৈঠক থেকেই তৃণমূল, বিজেপির পাশাপাশি একাধিক রাজনৈতিক দল নানান দাবি তোলেন। পর্যবেক্ষক জানিয়ে দেন, কোনও সঠিক ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে না। তবে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি জানিয়েছে, ৬১ হাজার ৬০৪ জন যে ‘ফ্রোজেন’ ভোটার রয়েছে তাদের ম্যাপিং হয়েছে বাবা- মা বা দাদু-ঠাকুমাকে সঙ্গে নিয়ে। এই জায়গাতে কিছু গরমিল থাকতে পারে।
উদাহরণ দিয়ে পুরুলিয়া (Purulia) জেলা বিজেপি জানিয়েছে, বেশ কিছু জায়গায় শ্বশুরকে বাবা বলে চালানো হচ্ছে। এছাড়া বংশপরম্পরায় ভাবে এদেশের নাগরিক অথচ নথিপত্র নেই। এই সংক্রান্ত ভোটারদেরকে বিভিন্ন তথ্য ও রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় নাম তুলে দেবে। এক্ষেত্রে যাতে কোনওরকম কারচুপি না হয়, সেটি খতিয়ে দেখার দাবি তোলেন তারা। কারন এই জেলায় এমন ভোটারের সংখ্যা প্রত্যেকটি বুথে পাঁচ থেকে সাত জনের বেশি থাকার সম্ভাবনা নেই। সেই সংখ্যাটা যদি বাড়ে তা ভাবার বিষয়। তাই ওই দিকেও নজর দেওয়ার কথা বলেছে বিজেপি। এদিনের বৈঠকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২০০২ সালে যাদের ভোটার তালিকায় নাম ছিল এবং যাদের বয়স ৬০। তাদের মধ্যে যাদের নাম এখনও রয়েছে সেই সমস্ত ভোটারকে নিজের চোখে দেখতে কমিশন ফিজিক্যাল স্পট ভেরিফিকেশন করবে। সর্বদলীয় বৈঠকে শাসক দল তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই বৈঠক প্রায় ঘন্টাখানেক চলে।
বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত এই জেলায় তথ্য আপলোড হয়েছে ৯১.৯২ শতাংশ। অর্থাৎ ২২ লাখ ২৫ হাজার ৮২৪ জনের ফর্ম ডিজিটাইজড হয়ে গিয়েছে। তবে তথ্য আপলোড হওয়ার কাজ হবে ৩৩৭০৩ টি ফর্ম-র। শতাংশের বিচারে ১.৩৯ শতাংশ। এই কাজ সবচেয়ে ঢিমেতালে চলছে পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকে। ওই ব্লকে তথ্য আপলোড হয়েছে ৮৭.৫৮ শতাংশ। এই জেলায় এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজড হয়েছে অর্থাৎ তথ্য আপলোড হওয়ার সংখ্যা ও ওই ফর্ম সংগ্রহ না হওয়ার সংখ্যা মিলিয়ে ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৯।
কমিশনের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই ফর্ম জমা না পড়ার সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১৫। শতাংশের বিচারে ৬.৬৯। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এনুমারেশন ফর্ম সংগ্রহ করেনি ২৮৫ জন। সবচেয়ে বেশি কাশিপুর বিধানসভার। ওই বিধানসভায় এই ফর্ম সংগ্রহ না করার সংখ্যা ১০৪। রঘুনাথপুর বিধানসভায় ৩০, পাড়াতে ১০, মানবাজারে ১৩, পুরুলিয়াতে ৪৩, জয়পুরে ৫২, বাঘমুন্ডিতে ২০, বলরামপুরে ৭ ও বান্দোয়ানে ৬। এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত হওয়া তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি, বিএলও-১ সুষেণচন্দ্র মাঝি বলেন, ‘‘কমিশনকে জানিয়েছি ভোটার তালিকা যাতে একেবারে স্বচ্ছভাবে হয়। সঠিক ভোটার যাতে কোনওভাবেই বাদ না যায়।’’ বিজেপির পুরুলিয়ার সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সৌরভ সিনহা বলেন, ‘‘এবারের এসআইআরে (SIR in Bengal) যে দুটি দুর্বল দিক রয়েছে সেই বিষয়গুলি কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি। ১২ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪ জন যে ফ্রোজেন ভোটার রয়েছে যাদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। যারা বাবা-মা, ঠাকুমাকে ভর করে ম্যাপিং করেছেন। সেই বিষয়টি দেখে নিতে হবে। বহু ক্ষেত্রেই শ্বশুরকে বাবা বলে চালানো হচ্ছে। এছাড়া যে সব ভোটার বংশপরম্পরায় ভারতের নাগরিক, যাঁদের কিছু তথ্য এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় নাম তুলে দেওয়ার বিধি রয়েছে, সেই বিষয়টিও দেখার প্রয়োজন আছে।’’ এই জেলাই একেবারে সরাসরি ম্যাপিং হয়েছে অর্থাৎ যাদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে সেই সংখ্যাটি ৯ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৫।