• নমো-পুতিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে এই হাউসে, কেন এখানেই থাকেন বিদেশি রাষ্ট্রনেতারা? কী এর ইতিহাস?
    এই সময় | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ভারতে পা রাখলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০২২ সালে ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে এই প্রথম দু’দিনের ভারত সফর পুতিনের। দুই দেশের কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উন্নতিতে এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে একটি নৈশভোজে যোগ দেবেন পুতিন। শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক রয়েছে পুতিনের। সেই বৈঠক হবে দিল্লির ‘হায়দ্রাবাদ হাউস’-এ। কেন ৯৭ বছরের পুরোনো এই স্থাপত্যকে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের স্থল হিসেবে বেছে নেওয়া হলো? এই স্থাপত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। জেনে নেওয়া যাক এর ইতিহাস।

    ১৯১১ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত হায়দরাবাদের শাসনভার ছিল নিজাম মীর ওসমান আলির হাতে। পরে হায়দরাবাদ ভারতের অংশ হয়। মীর ওসমান আলির প্রাসাদ ছিল এই হাউস। দিল্লিতে স্থায়ী বসবাসের জন্যেই তিনি এই প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। ১৯২৮ সালে এই প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল।

    দিল্লিতে একটি স্থায়ী বাসভবন নির্মাণের জন্য ভাইসরয়ের বাড়ির (বর্তমানে রাষ্ট্রপতি ভবন) কাছে জমি খুঁজছিলেন তিনি। প্রথমে ৮.২ একর জমি কেনেন। পরে এর সঙ্গে যোগ হয় আরও ৩.৭৩ একর জমি। সেখানেই নির্মাণ হয় এই প্রাসাদের। যদিও পুরো প্রাসাদটি নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পরে ওসমান আলির একেবারেই পছন্দ হয়নি এটি। তিনি একরাতের জন্যেও ছিলেন না এই প্রাসাদে।

    এই প্যালেসের নকশা তৈরি করেছিলেন বিখ্যাত স্থাপত্যশিল্পী স্যার এডউইন লুটিয়েন্স। দিল্লি গেট থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ভবনের নকশা তৈরির কৃতিত্ব রয়েছে লুটিয়েন্সের তালিকায়। ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতির সঙ্গে মুঘল আর্কিটেক্ট-এর সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছিল এই ভবনটি। প্রাসাদের ভিতরের আলো আনা হয়েছিল নিউ ইয়র্ক থেকে। লন্ডনের দুটি বিখ্যাত সংস্থা, হ্যাম্পটন অ্যান্ড সন্স এবং ওয়ারিং অ্যান্ড গিলো, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা তৈরি করে। ইরাক, তুরস্ক এবং আফগানিস্তান থেকে কার্পেট, ইউরোপ থেকে রুপোর জিনিসপত্র, বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই প্রাসাদ।

    বিদেশ মন্ত্রক ১৯৫৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের কাছ থেকে ‘হায়দ্রাবাদ হাউস’ লিজ় নেয়। স্থায়ী চুক্তি হয় ১৯৭০ সালে। এই ভবনের বদলে নয়া ভবন নির্মাণের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে ৭.৫৬ একর জমি বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর পরে থেকেই ‘হায়দ্রাবাদ হাউস’ ভারতের অন্যতম কূটনৈতিক ভবন হয়ে ওঠে। ভারতে সফররত আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ এই ভবনে ছিলেন।

    যে কোনও গোপনীয় কূটনৈতিক স্তরের আলোচনার জন্য এই ভবন অত্যন্ত নিরাপদ। একাধিক স্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে এই ভবনে। পাশাপাশি ঐতিহাসিক দিক থেকেও বিদেশি অতিথিদের এই ভবনে আপ্যায়নের বিষয়টি জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐতিহ্যশালী।

  • Link to this news (এই সময়)