• রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেখা নেই রাজশাহীর আবদুল-কামালদের! নলেন-পাটালিগুড়ের গন্ধে ভরবে না তিস্তাপাড়
    প্রতিদিন | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: মাস ঘুরলেই পৌষ মাস। সংক্রান্তিতে বাঙালির ঘরে ঘরে শুরু হবে পিঠেপুলি উৎসব। ফি বছর ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে গজলডোবায় পাড়ি জমাতেন বাংলাদেশের রাজশাহীর বাগা এলাকার গাছি আবদুল রহিম, কামাল হোসেন, কামরুল ইসলামরা। ফি বছর ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে গজলডোবায় পাড়ি জমাতেন তারা। শুরু হয়ে যেত খেজুরের রস কড়া জ্বালে পাক দিয়ে গুড় তৈরির কারবার। তিস্তাপাড়ের গোটা এলাকা নলেন ও পাটালিগুড়ের গন্ধে ম, ম করত। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা পালটে দিয়েছে অনেক ছবি। নেই খেজুর গাছ বায়নার হিড়িক। তিস্তাপাড়ে তৈরি হয়নি অস্থায়ী আস্তানা, হেসেল।

    ডিসেম্বর শুরু হতে আসতেন আবদুল, রহিমরা। প্রায় এক দশক ধরে গজলডোবায় পাড়ি জমাতেন খেজুর গুড় তৈরির নেশায়। শীতের মরশুমের শুরুতে রোজগারের আশায় দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়াই ছিল আবদুলদের অভ্যাস। হাতে তৈরি গুড় তুলে দিতেন পর্যটকদের হাতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবারও সেই ছন্দের তাল কেটেছে। তাই মন খারাপ গজলডোবার বাসিন্দা সুভাষ সরকার, মিতালি সেনদের। সুভাষবাবু জানান, শীত এলেই ওরা দলবেঁধে চলে আসত। শুরু হতো নলেন, পাটালি গুড় তৈরির আয়োজন। প্রচুর মানুষ ভিড় জমাতেন টাটকা সুস্বাদু গুড় কিনতে। এবার সেটা নেই।

    এলাকার শতাধিক খেজুর গাছ মরশুমের জন্য বায়না করতেন পরিযায়ী আবদুল, রহিমরা। রসের পরিমাণ বুঝে দাম দিতেন। সেটাও নেহাত কম নয়। গাছ প্রতি হাজার, বারোশো হয়ে যেত। গাছের যত্নআত্তির সমস্যা থাকত না। বায়নার পর ওরাই প্রতিদিন পরিচর্যা করতেন। এরপর শুরু হতো গাছে উঠে হাঁড়ি বাঁধা। রসে হাঁড়ি ভরলে সেটা নামিয়ে আনা। তিস্তাপাড়ের গ্রামে সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হতো নলেন গুড়। সেই গুড় পৌঁছে যেত শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তে। বিভিন্ন বাজারে। প্রতিদিন গড়ে তিনশো লিটার রস সংগ্রহ করে জ্বাল দিয়ে তৈরি হতো পঞ্চাশ কেজি গুড়। খোলা বাজারে ওই গুড় কোথাও বিক্রি হতো তিনশো টাকা কেজি। আবার কোথাও পাচশো টাকা। কম দামেও খেজুর গুড় মিলেছে। সেটাতে চিনি মেশানো থাকতো। পৌষ সংক্রান্তিতে এমন খাটি গুড়ের জন্য মুখিয়ে থাকতেন উত্তরের বাঙালি পরিবারগুলো। এবারও সেটাই মিস করবেন অনেকে।

    স্থানীয় বাসিন্দা মিতালিদেবীর কথায়, “এখানে আবদুলদের হাতে তৈরি গুড় যারা একবার মুখে তুলেছেন বারবার এসেছেন। এবারও প্রত্যেকে ওদের মিস করবে।” কামরুলরা যে এবারও আসতে পারবেন না সেটা অবশ্য নভেম্বরেই টের পেয়েছেন মিলনপল্লি, টাকিমারি এলাকার বুধেন দাস, বিনয় সরকাররা। বুধেনবাবু বলেন, “এবার খেজুর গাছ বিক্রি হবে না। যারা ফেরি করে রস বিক্রি করে তদের খোঁজে আছি।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)