সুদীপ রায়চৌধুরী: SIR-এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল ভোটার তালিকা স্বচ্ছ্ব ও অবৈধ ভোটার মুক্ত করা। কিন্তু সম্প্রতি একাধিক ক্ষেত্রে সেই স্বচ্ছ্বতাই প্রশ্নের মুখে। প্রশ্নের মুখে বিএলও-দের ভূমিকা। এই পরিস্থিতিতে এবার বুথ স্তরের আধিকারিকদের একপ্রকার আইনি পথে ‘শাসানি’ দিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর থেকে একটি মুখবদ্ধ খামে বিএলওদের লেখা চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় বলে দেওয়া হল, কোনওরকম ‘ইচ্ছাকৃত ভুল’ ধরা পড়লেই চরম আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
দিন কয়েক আগেই কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছিল রাজ্যে ২২০৮টি এমন বুথ রয়েছে যেখানে ১০০ শতাংশ এনুমারেশন ফর্ম ফেরত এসেছে। ‘আনকালেক্টেবল ফর্মের সংখ্যা শূন্য। যার অর্থ, ওই বুথগুলিতে এক বছরে কোনও ভোটার মারা যাননি বা নিখোঁজ হননি বা বাইরে চলে যাননি। ওই সংখ্যাটা প্রকাশ্যে আসার পর গোটা SIR প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠছিল। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, এতগুলি বুথে এক বছরে কেউ মারা যাননি, নিখোঁজ হননি বা বাইরে চলে যাননি, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিরোধীদের অভিযোগ পেয়েই বিএলও-দের উপর চাপ সৃষ্টি করে কমিশন। এই বুথগুলির রিপোর্ট ফের খতিয়ে দেখতে বলা হয়। কমিশন রিপোর্ট চাওয়ার পর ওই ধরনের বুথের সংখ্যা কমে রাতারাতি নেমে এসেছে সাতে। এতেই স্পষ্ট, বিএলও স্তরে কোথাও একটা ভুল হয়েছিল। সেই বুথ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দুই-ই হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বিএলও-দের ইচ্ছাকৃত কোনওরকম ‘ভুল’ করা নিয়ে সতর্ক করে দিল নির্বাচন কমিশন। এদিন কমিশনের চিঠিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, “আপনারা নিশ্চিত করবেন যে এই কাজে কোনওরকম ইচ্ছাকৃত ভুলভ্রান্তি না হয়। কোনওরকম ভুলভ্রান্তি থাকলে তা সংশোধনের জন্য আপনারা আরও কয়েকদিন সময় পাচ্ছেন।” এরপরই কমিশনের প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি, “বিএলও-রা ভেরিফিকেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন। ইচ্ছাকৃত কোনও ভুল দেখা গেলে নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।” কমিশনের সাফ কথা, বিএলও-দের সুনিশ্চিত করতে হবে যে সমস্ত মৃত/অনুপস্থিত/স্থানান্তরিত/ডুপ্লিকেট ভোটারের নাম যেন বাদ দেওয়া হয়। কমিশনের SIR-এর কাজের মূল উদ্দেশ্য হল কোনো যোগ্য ভোটার যেন বাদ না যায় এবং কোনো অযোগ্য ভোটারের নাম যেন ভোটার তালিকায় না থাকে।”
উল্লেখ্য, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩২ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনও বিএলও বা নির্বাচনী আধিকারিকের কর্তব্যে গাফিলতি ধরা পড়লে দু’বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে। কমিশন ঘুরিয়ে সেই ধারারই ভয় দেখাচ্ছে। SIR-এর কাজের চাপে এমনিতেই মহা দুর্দশায় বিএলও-রা। কাজের চাপে কেউ অসুস্থ হচ্ছেন। কোথাও কোথাও আত্মহত্যারও খবর আসছে। যা নিয়ে বৃহস্পতিবারই উদ্বেগপ্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে কমিশনের এই প্রচ্ছন্ন শাসানি বিএলও-দের উপর চাপ বাড়াবে বই কমাবে না।