প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বহালের রায়ে বিকাশ-বিড়ম্বনায় সিপিএম, ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থা আলিমুদ্দিনের
প্রতিদিন | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরির মামলার রায় নিয়ে পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রবল বিড়ম্বনায় বঙ্গ সিপিএম। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের রায় খারিজ করে তাঁদের পুনর্বহালের যে নির্দেশ দিয়েছে, বিকাশ তা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন। ডিভিশন বেঞ্চের রায় চ্যালেঞ্জ করে মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টে গেলে তিনি আইনি লড়াই লড়বেন বলেও জানিয়েছেন। বিকাশের মন্তব্য ও অবস্থান চাকরি ফিরে পাওয়া শিক্ষকদের পরিবার ও আত্মীয়-শুভানুধ্যায়ীদের কাছে তাঁকে কার্যত ‘ভিলেন’ করে তুলেছে। এহেন বিকাশকে নিয়ে পুরোপুরি দ্বিধাবিভক্ত রাজ্য সিপিএম।
পার্টির একাংশের হিসেব, ৩২ হাজার শিক্ষক ও তাদের আত্মীয়পরিজন মিলিয়ে কমপক্ষে দেড় লক্ষ পরিবার ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে খুশি হয়েছেন। সেক্ষেত্রে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বিকাশের ওই মন্তব্য সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কে আরও ধাক্কা দিতে পারে। বিকাশ-বিরোধী পার্টির এই অংশের ব্যাখ্যা, “সাধারণ মানুষ দিনের শেষে চাকরি ও রুটিরুজির প্রশ্নে সরাসরি কে পক্ষে ও বিরুদ্ধে তার হিসেব কষে। কেউ এত ন্যয়নীতি বোঝে না। সর্বোপরি এই মামলার সঙ্গে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে থাকায় সিপিএম সাংসদের ভূমিকা নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠছে।” বস্তুত, এই কারণে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বিকাশ-বিরোধীদের মনোভাব আঁচ করেই বৃহস্পতিবার অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমরা পার্টিগত ভাবে কোনও নির্দেশ তাঁকে আগেও দিইনি। এখনও দেব না। কারণ, পেশাগত ভাবে তিনি কী করবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। সবটাই নির্ভর করে তাঁর বোধের উপর।’’ আবার পার্টির সাধারণ সমর্থককূল ও চাকরি ফিরে পাওয়া শিক্ষক পরিবারগুলির কথা মাথায় রেখে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী রায় স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘কোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে চাকরিহারা মাস্টারমশাইরা স্বস্তি পেয়েছেন। বছরের পর বছর তারা নানা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এদের একটা বড় অংশ যোগ্য তাতে কোনও সন্দেহ নেই। চাকরি বহাল থাকাটা জরুরি ছিল। যোগ্যদের কোনও অপরাধ নেই।’’ ফলে বিকাশের অবস্থান নিয়ে সিপিএমের ভিতরে যে দুধরনের মত রয়েছে, তা স্পষ্ট।
সুপ্রিম কোর্টে বিকাশের আইনি লড়াই নিয়ে সিপিএম অবশ্য দূরেই থাকতে চাইছে। জেলা কমিটির এক সদস্যের কথায়, হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের সরাসরি বিরোধিতা করলে ছাব্বিশের ভোটের আগে পার্টির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া, এই প্যানেলে বাম সমর্থক পরিবারের ছেলেমেয়েরাও রয়েছেন। এই রায় স্বাগত জানিয়েও সিপিএমকে আবার রাজ্য সরকারের অন্ধ বিরোধিতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কথাও বলতে হচ্ছে। আবার চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তাও দিতে হচ্ছে। কার্যত শাঁখের করাতের মতো অবস্থা হয়েছে আলিমুদ্দিনের। সম্প্রতি ২৬ হাজার চাকরি বাতিল পর্বেও বিকাশ ও সিপিএম দুই মেরুতে ছিল। পার্টির মধ্যেই ছাত্র সংগঠন এসএফআই ও শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন তিনি। এবার অবশ্য এখনও তেমন কিছু প্রকাশ্যে ঘটেনি।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সেলিম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর বড় ভূমিকা ছিল। ওকে রেহাই দিতেই প্রাথমিকে নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে দুর্নীতিগ্রস্তদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। দলবদলের পুরস্কার। ইডি,সিবিআই তদন্ত কাদের মুখ চেয়ে হয়ে থাকে তা স্পষ্ট।…’ যদিও প্রশ্ন উঠেছে, সেলিম কোন শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছেন, তৃণমূলের নাকি বিজেপির!