এসআইআরের প্রভাব! গত তিন মাসে ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ও পারে ফিরে গিয়েছেন ১৮৬ জন বাংলাদেশি: বিএসএফ
আনন্দবাজার | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ চলছে। অভিযোগ, এই আবহে অনেকে বাংলাদেশি নাগরিক ভারত ছেড়ে নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন। গত বছর ভারত থেকে ৪৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিজের দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। এ বছর গত তিন মাসে সেই সংখ্যা হয়েছে ১৮৬! বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন কদমতলায় বিএসএফের উত্তরবঙ্গের ফ্রন্টিয়ার সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানান বিএসএফের উত্তরবঙ্গের আইজি মুকেশ ত্যাগী। তিনি জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশ রুখতে চিকেন’স নেক বা শিলিগুড়ি করিডরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিএসএফের ৬১তম প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই উপলক্ষে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুকেশ। সেখানেই তিনি জানান, এসআইআর আবহে বাংলাদেশি নাগরিকদের এ দেশ ছেড়ে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছ। মুকেশের কথায়, ‘‘এসআইআর আবহে কিছু বাংলাদেশির ভারত ছাড়ার প্রবণতা বেড়েছে।’’ প্রসঙ্গত, গত ২৭ অক্টোবর এসআইআর ঘোষণা করার পর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতি দিন প্রচুর মানুষকে বাংলাদেশ ফিরে যেতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন, অবৈধ ভাবে এ দেশে ঢুকেছিলেন। রুজিরুটির আশায় বাড়ি ছেড়েছিলেন। এখন আবার বাড়ি ফিরে যেতে চান। অনেকেই কোনও মন্তব্য করেননি। এই আবহে চিকেন’স নেক বা শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান মুকেশ। তাঁর কথায়, ‘‘চিকেন’স নেকে থাকা সীমান্তের ৭৫ শতাংশ এলাকায় নতুন অত্যাধুনিক ফেন্সিং এবং ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সীমান্তে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে।’’
মুকেশ আরও জানিয়েছেন, ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতাতে পিআইও (পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ) ব্যবহার করছে পাকিস্তান। সে জন্য আগেভাগে প্রস্তুত বিএসএফ। পিআইও নিয়ে বিএসএফ জওয়ান এবং আধিকারিকদের সচেতন করার পাশাপাশি কাউন্সেলিং, বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে বলেও জানান বিএসএফের আইজি। যদিও পিআইওর প্রভাব এবং সক্রিয়তাকে একবারেই নিষ্ক্রিয় করা গিয়েছে বলে জানান তিনি।
পিআইও নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের আইজি মুকেশ। মুকেশের কথায়, ‘‘অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে তা জওয়ান এবং আধিকারিকদের তুলতে বারণ করা হয়েছে। হোয়াট্সঅ্যাপে অজানা গ্রুপে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও সন্দেহজনক গতিবিধি নজরে এলে তা সদর দফতরে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান এ সব খুব বেশি করে থাকে। যদিও আমরা তাদের রুখতে সক্ষম হয়েছি।’’
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিএসএফের অধীনে থাকা ৯৩৬ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যে প্রায় ২৫০ কিলোমিটারে ওই এনডিএফ ফেন্সিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পুরনো কাঁটাতার ছিল আট ফুট লম্বা। তা সহজেই কেটে বা ডিঙিয়ে পারাপার করা যেত। এই নতুন কাঁটাতারের উচ্চতা ১২ ফুট। তা সহজে কাটা যাবে না। এ ছাড়াও আগেই সীমান্ত এলাকায় স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট রিডার যন্ত্রের ব্যবহার করছে বিএসএফ।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাইট ভিশন, বুলেট ক্যামেরা এবং ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে আটক অনুপ্রবেশকারী এবং পাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করা হয়েছে বিএসএফের তরফে। একে বলে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন ব্যাঙ্কিং’। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সীমান্তে আটক অনুপ্রবেশকারীর সমস্ত তথ্য জমা করা হবে। পরের তিনি ধরা পড়লে তাঁর আঙুলের ছাপ থেকে আগের সমস্ত অপরাধের তথ্য পেয়ে যাবে বিএসএফ।
আরও জানা গিয়েছে, গত এক বছরে বিএসএফ অভিযান চালিয়ে সাড়ে আট কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছে। চলতি বছরে ১৫২ জন ভারতীয় নাগরিককে আটক করে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে। ৪৪০ জন বাংলাদেশী ও ১১ জন অন্য দেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সীমান্তে পাম্প একসন বন্দুক ব্যবহার করা হচ্ছে। নজরদারির জন্য টহলদারির পাশাপাশি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সীমান্তের কিছু অংশে কাঁটাতার নেই। মুকেশ জানিয়েছেন, সেখানে কাঁটাতার দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ চলছে। ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতার দেওয়ার জন্য জমির প্রয়োজন রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ কিলোমিটারের জন্য জমি হস্তান্তর হয়েছে। চলতি বছরে এক কিলোমিটার জমি ফেন্সিংয়ের জন্য পাওয়া গিয়েছে। মোট সীমান্তের ২৫০ কিলোমিটার সীমান্তে এনডিএফ লাগানোর কাজ চলছে। চলতি বছরে ১৫০ কিলোমিটার এনডিএফ ফেন্সিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৮০ কিলোমিটারের কাজ চলছে। মোট সীমান্তের ৮৮ শতাংশ ফেন্সিং রয়েছে। প্রায় ১০৪ কিলোমিটার কাঁটাতারহীন সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে ৫৬ কিলোমিটার নদী রয়েছে। কাঁটাতার লাগাতে জমি অধিগ্রহণের জন্য সিপিডাব্লুডি রাজ্য সরকারকে প্রায় ৫২ কোটি টাকা দিয়েছে। চলতি বছরে ৩৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। দু’একর জমি পাওয়া গিয়েছে।