বিল নিয়ে কথা বলে বাংলাকে বদনাম নির্মলার, সরব তৃণমূল
বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: রাজ্যসভায় এক্সাইজ বিলের সংশোধনী নিয়ে কথা বলার সুযোগে বাংলার বদনাম করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ভোটের ভাষণ দিলেন তিনি। বলার কথা সেন্ট্রাল এক্সাইজ সংশোধনী বিলের অন্তর্ভুক্ত বিষয় নিয়ে। অথচ সেই পথে না হেঁটে তিনি বাংলা সম্পর্কে মিথ্যাচার করে বিভ্রান্ত করলেন সভাকে। এই মর্মে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সি পি রাধাকৃষ্ণনকে চিঠি দিচ্ছে তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপিরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্যসভায় বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ খণ্ডন করে তৃণমূলকে প্রবল আক্রমণ করেন নির্মলা সীতারামন। বিস্তারিত তালিকা পেশ করে করে বোঝান যে, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল অর্থ বরাদ্দ করেছে। কিন্তু সেই টাকার যথাযথ ব্যয় না করে স্বচ্ছতা দেখায়নি রাজ্য সরকার। এমনকি তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্য থেকে শিল্প সংস্থাগুলি যে পালাচ্ছে সেই তালিকা প্রদান করেন অর্থমন্ত্রী। তৎক্ষণাৎ তূণমূল এমপিরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। বলেন, দেশের একজন অর্থমন্ত্রী এভাবে রাজ্যসভাকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে কেন ব্যবহার করছেন? যে বক্তব্যগুলির মধ্যে সত্যতা নেই। পালটা নির্মলা বলেন, প্রত্যেকটি তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। রাজ্যসভার কাছে জমা দিচ্ছি। সত্য-মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যাবে। আপনারা জবাবদিহি চেয়েছেন যে, রাজ্যকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। আমি তার জবাব দিচ্ছি। এখন আবার আপনারা বলছেন, সেই জবাব শুনবেন না! তিনি বলেন, এক্সাইজ বাড়ানো হচ্ছে, তামাকজাত পণ্যের উপর। সেই টাকার ভাগ পাবে রাজ্য। সেই টাকা দিয়ে রাজ্য যেন উপকার করে তামাকশিল্পে জড়িত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। এক্সাইজ যেহেতু রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয়, তাই তামাকজাত দ্রব্যের উপর এক্সাইজ বাড়ানোর জেরে রাজ্যের আয় বৃদ্ধি পাবে কিছুটা।
এদিকে নির্মলা সীতারামন এক্সাইজ বিলের পরিবর্তে লাগাতার বাংলার জন্য কেন্দ্র কী কী দিয়েছে এবং রাজ্য সরকার কীভাবে বাংলার সর্বনাশ করছে তার ফিরিস্তি দেন। খোদ রাজ্যসভার চেয়ারম্যানও তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আপনি বিল নিয়ে বলুন। বিলের বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকুন। বেশ কয়েকবার এই নির্দেশিকা চেয়ারম্যান দেওয়ার পর দ্রুত ভাষণ সমাপ্ত করে দেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে সাগরিকা ঘোষ তালিকা দিয়ে ১০০ দিনের কাজ থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কীভাবে কেন্দ্র বাংলার টাকা আটকে রেখেছে সেই বিষয়ে মন্ত্রীর কাছে জবাব চেয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী তার উত্তরে, বলেন, শুধু ট্যাক্সের ভাগ বাবদ বাংলাকে গত ১০ বছরে ৫ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ১০০ দিনের কাজে দেওয়া হয়েছে। বাংলা থেকে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি কোম্পানি চলে গিয়েছে কেন বিগত ১৪ বছরে? অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন। পালটা তৃণমূল এমপিরা সমস্বরে বলেন, বাংলার জন্য একটিও ছোট কারখানা কিংবা শিল্প প্রকল্প মোদি সরকার করেছে তার প্রমাণ দিতে পারবেন না অর্থমন্ত্রী। এতগুলো বাজেট হয়ে গেল। বাংলার প্রাপ্তি নগণ্য। বাংলা থেকে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নিচ্ছে কেন্দ্র। শেষ পর্যন্ত প্রবল তর্কবিতর্কের পর রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করে তৃণমূল। এমনকি রাজ্যসভার তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও ব্রায়ান পয়েন্ট অফ অর্ডার দিতে চেয়েও প্রত্যাখ্যাত হন। যা সাংসদদের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ তৃণমূলের। সেই জন্যই চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করা হবে আজ।