সংসদে ম্রিয়মান কংগ্রেস, দাবি আদায়ে দাপিয়ে বেরাচ্ছেন তৃণমূলের এমপিরা
বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: তূণমূল যেখানে সংসদ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সেখানে কংগ্রেস সাংসদের গরহাজিরা কেন? লোকসভা হোক বা রাজ্যসভা, কংগ্রেস সাংসদদের উপস্থিতির হার ভালো নয়। চারদিন হয়ে গেল সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। কংগ্রেসের লোকসভায় রয়েছে ৯৯ জন সাংসদ। রাজ্যসভায় ২৯। কিন্তু গত কয়েকদিন সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এমনকি দিল্লির দূষণ, ঠান্ডা উপেক্ষা করেও সংসদে আসছেন ৮৩ বছরের মল্লিকার্জুন খাড়্গে। অথচ অনেক কম বয়সি কং-সাংসদই গরহাজির। তাই ক্ষুব্ধ খাড়্গে এবং রাহুল। দলীয় সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। দলের এক বৈঠকে খাড়্গে বলেছেন, আমাদের লোকজন আসছে না কেন? সরকারকে চেপে ধরতে হলে সংসদে পুরো শক্তি দিয়ে নামতে হবে। তা নাহলে তো মোদি সরকার বুলডোজার চালাবে।
কংগ্রেসের এহেন গাছাড়া পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পারফরম্যান্স অত্যন্ত নজরকাড়া। চিকিৎসার কারণে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশে। তবে লোকসভায় লিখিত প্রশ্নে সরকারকে চেপে ধরেন তিনি। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ‘রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিমে’ টাকা দিতে কেন বিলম্ব, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল তাঁর। জবাবে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত গত তিন বছরে গোটা দেশে সব মিলিয়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। যা অনুমোদিত বরাদ্দের ৩৮ শতাংশ। বাংলাকে ৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিন বছরে মাত্র ৮৭১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
দলনেতা সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও সংসদের নিম্নকক্ষে তৃণমূলের দাপটে অবশ্য কোনও কমতি নেই। মুখ্য সচেতক কাকলি ঘোষদস্তিদার যেমন সরকার, স্পিকারের ডাকা বৈঠকে যাচ্ছেন, প্রতিবাদ করছেন, দাবি আদায় করছেন, একইভাবে প্রশ্ন হোক বা জিরো আওয়ার দলের বাকি সাংসদরা সরব হচ্ছেন। এরাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বাকিদের সঙ্গে সমন্বয়ে মোদি সরকারকে চেপে ধরছেন।
বৃহস্পতিবারও বাংলার বঞ্চনার ইস্যুতে সরব হয়েছে তৃণমূল। বিজয় চক থেকে সংসদ পর্যন্ত হয়েছে মিছিল। ধর্ণা, বিক্ষোভ। দাবি একটাই, বাংলার প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া মেটাক মোদি সরকার। সংসদের অন্দরেও এদিন এই দাবিতে জিরো আওয়ারে সরব হয়েছেন অসিত কুমার মাল। ১০০ দিনের কাজের পারিশ্রমিক দিনপ্রতি ৬০০ টাকার করার দাবি করেন তিনি। একইভাবে আজ শুক্রবার রাজ্যসভায় মনরেগা ইশ্যুতে প্রশ্ন করে সরকারকে চেপে ধরতে তৈরি ডেরেক। লোকসভায় এদিন বিজেপিকে বাংলা বিরোধী, নারী বিদ্বেষী, মণীষী বিদ্বেষী, গরিব বিরোধী বলেও তোপ দাগেন আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগ। বলেন, যে রাজা রামমোহন রায়কে ব্রিটিশদের দালাল বলে অপমান করেছে বিজেপি। বাংলার মানুষ মণীষীদের অপমান বরদাস্ত করবে না। আগামী সপ্তাহে লোকসভায় বন্দেমাতরমের সার্ধশতবর্ষ নিয়ে তৃণমূলের হয়ে বলবেন কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং মহুয়া মৈত্র। রাজ্যসভায় সুখেন্দুশেখর রায় এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে লোকসভায় বক্তা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শতাব্দী রায়। সংসদে দাপট বাড়াতে স্রেফ নিজেদের দলই নয়। জম্মু-কাশ্মীর থেকে রাজ্যসভায় সদ্য নির্বাচিত ওমর আবদুল্লার দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের তিন সাংসদ চৌধুরী মহম্মদ রমজান, সাজাদ কিচলু এবং শাম্মি ওবেরয়কেও নিজেদের ইশ্যুতে কাছে টানছে তৃণমূল। সভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সরকারের প্রস্তাব মেনে কংগ্রেস একদিনেই বন্দেমারতমের সার্ধশতবর্ষ, নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়ে গিয়েছিল। তবে তৃণমূলের স্পষ্ট দাবি, দু’দিন আলোচনা করতে হবে। সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছে এআইএডিএমকে, সমাজবাদী পাটি, আরজেডিও।