‘বইমেলায় পড়ুয়াদের আনতেই হবে’, নির্দেশ সিদ্দিকুল্লাহর লাইব্রেরি বন্ধ রাখা যাবে না, বললেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী
বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কোনও লাইব্রেরি বন্ধ রাখা যাবে না। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়িতে জেলা বইমেলার উদ্বোধনে এসে এমনই বার্তা দিলেন রাজ্যের গ্রন্থগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। সেইসঙ্গে লাইব্রেরিতে ছেলেমেয়েদের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টার চালুর ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের উদ্যোগ নিতে হবে বলে নির্দেশ তাঁর। বইমেলায় পড়ুয়াদের বেশি করে আনার ব্যাপারেও প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, বইমেলা হবে আর সেখানে ছাত্রছাত্রীরা আসবে না, বইয়ের সঙ্গে তাদের পরিচয় হবে না, এটা হতে পারে না। প্রয়োজনে গাড়ি ভাড়া করে পড়ুয়াদের বইমেলা প্রাঙ্গণে নিয়ে আসতে হবে। বইমেলা যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেটা জানাতে বিশেষভাবে মাইকিং করতে হবে।
জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ৭৬টি লাইব্রেরি রয়েছে। বর্তমানে ৭৩টি লাইব্রেরি চালু থাকলেও কর্মীর অভাবে তিনটি বন্ধ। এমনটা জানতে পেরেই এফডিআই স্কুলের মাঠে জলপাইগুড়ি জেলা বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে গ্রন্থাগারমন্ত্রী বলেন, একটি লাইব্রেরিও বন্ধ রাখা যাবে না। যেভাবেই হোক আমরা কর্মী জোগান দেব। রাজ্যে সবমিলিয়ে লাইব্রেরিতে ১৪টি ভাষায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ বই রয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। বলেন, আমরা অনেক লাইব্রেরিতে চাকরির পরীক্ষায় বসার জন্য ছেলেমেয়েদের প্রস্তুত করতে কোচিং কর্নার করেছি। এটা সব জায়গাতেই করতে হবে। জেলায় প্রশাসনের যেসব আধিকারিক রয়েছেন, তাঁদের এব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রন্থাগারমন্ত্রী বলেন, লাইব্রেরিতে যাঁরা আসছেন, তাঁদের বেশিরভাগই চাকরির পরীক্ষার বইপত্র পড়ার জন্য আসছেন, গবেষণাধর্মী বই পড়ার ঝোঁক কমছে। এটা শুভ লক্ষণ নয়। নতুন প্রজন্ম যদি গবেষণামূলক বইপত্র না পড়ে, তাহলে তাদের মেধা উন্নত হবে কী করে। যেভাবে দিনের পর দিন বর্তমান প্রজন্মের বই পড়ার প্রতি ঝোঁক কমছে, তা নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যে বাড়িতে বই নেই, সেই বাড়ি মৃত। যে বাড়িতে বই আছে, সেই বাড়িতে আলো আছে, প্রাণশক্তি আছে। বইমেলার উদ্বোধনে উপস্থিত কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংযোজন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি জোগাতে পারে বই। যতদিন একটিও বই ছাপা হবে কিংবা একটিও বই পড়া হবে, ততদিন শুভশক্তির পরাজয় ঘটতে পারে না। বইমেলা উপলক্ষ্যে এদিন জলপাইগুড়ি শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা অংশ নেন। ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলা বইমেলা চলবে। গতবার জলপাইগুড়ি জেলায় সরকারি মেলায় প্রায় ২২ হাজার পাঠক এসেছিলেন। ২০ লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। এবার বই বিক্রি বাড়বে বলে আশাপ্রকাশ করেন মন্ত্রী। বলেন, রাজ্যে ২৪ নভেম্বর থেকে জেলা বইমেলা শুরু হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। গতবার সবমিলিয়ে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হয় মালদহে, ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ১১ হাজার টাকার। জেলা বইমেলায় বিক্রিতে দ্বিতীয় স্থানে ছিল মুর্শিদাবাদ। ওই জেলায় ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছিল গত বছর।