• ঝিলে ভাসছে প্লাস্টিক, থার্মোকলের থালা-বাটি, কমছে শীতের অতিথি
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: পর্যটনের শহর আলিপুরদুয়ার। এই শহরে পরিযায়ী পাখিদের আস্তানা কমছে। কমছে আনাগোনাও। অথচ কয়েক বছর আগেও শীতের মরশুমের শুরুতে ডুয়ার্সের এই শহরের জলাভূমিগুলিতে পরিযায়ী পাখিদের অবাধ বিচরণ ছিল। এবার ডিসেম্বর মাস পড়লেও শহরের ঝিলগুলিতে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা চোখে পড়ছে না। স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি এর জন্য শহরের ঝিলগুলি প্লাস্টিক, থার্মোকল ও কচুরিপানায় বুজে যাওয়াকেই দায়ী করেছে। 

    আলিপুরদুয়ার জেলা সদরে ১৩-১৪টি ঝিল আছে। এ বছর শীতের মরশুমে কোনও ঝিলেই পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ দেখা যাচ্ছে না। শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিলও শুনশান। পরিযায়ী পাখির দেখা না মেলায় হতাশ জেলাবাসী। সকলেই চাইছেন, ঝিলগুলির স্বাস্থ্য ফেরাতে পুরসভা ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। 

    শহরের ছোট-বড় প্রতিটি ঝিলে একসময় মেলার্ড, রেস্ট ক্রেস্টেড পোচার সহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির অবাধ আনাগোনা ছিল। শীতের মরশুমে কালজানি নদীর ধারে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিলটিতে আসত রাঙামুড়ি পাখি, লেসার হুইসলিং টিল, গ্যারেড ওয়াল সহ আরও কয়েকটি প্রজাতির পাখি। ডাউকের সঙ্গে ঝিলগুলিতে পানকৌড়িদেরও দেখা যেত। বিগত কয়েক বছর ধরে সেসব আর দেখা যাচ্ছে না। 

    আলিপুরদুয়ার বার্ডাস ক্লাবের সদস্য শিবুন ভৌমিক বলেন, শিক্ষিত মানুষের অসচেতনতার কারণে শহরের ঝিলগুলি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ, থার্মোকলের থালা-বাটিতে ভরে গিয়েছে। কিছু ঝিলের একাংশ দখল হয়েছে। এভাবেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাখিদের আস্তানা। সেই কারণে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা কমেছে শহরের জলাশয়গুলিতে। শিবুনবাবুর মতে, ঝিলগুলিতে অবশ্যই ৪০ শতাংশ কচুরিপানা থাকতে হবে। কারণ ওই কচুরিপানাতেই পরিযায়ী পাখিরা বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে, ঘুমোয়। বাকি ৬০ শতাংশ ঝিল পরিষ্কার থাকতে হবে। তবেই না পাখিরা আসবে জলাভূমিগুলিতে। কিন্তু জেলা শহরের ঝিলগুলি তো পুরোটাই বুজে গিয়েছে। 

    এভাবে হঠাৎ করে শহরে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা কমে যাওয়ার জন্য বাসিন্দারা ঝিল নিয়ে পুরসভার উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন। ঝিল সংস্কারে পুরসভার গরজ না থাকায় এই পরিস্থিতি হয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিযোগ। শহরে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর। তিনি বলেন, শহরের ঝিলগুলি সংস্কারে চলতি মাসেই অর্থ বরাদ্দ করে কাজ শুরু হবে। তবে এই শহরে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা শুরু হয় ডিসেম্বরের শেষে। এখনও হাতে সময় আছে। পরিযায়ী পাখির সংখ্যা আগের থেকে কমলেও আমরা আশাবাদী, দূর দেশের ওই পাখিরা আসবে। • জলাশয়ে মিশছে আবর্জনা। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)