সংবাদদাতা, রামপুরহাট: পবিত্র শহর অমৃতসরে রয়েছে স্বর্ণমন্দির। মন্দিরের চারপাশের জলাশয়ের নামানুসারে ওই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। ওই জলাশয় মন্দিরের পবিত্রতা ও সৌন্দর্য্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। এবার তারাপীঠ মন্দিরের জীবিতকুণ্ডকে স্বর্ণমন্দিরের জলাশয়ের মতো সাজিয়ে তুলতে শুরু করল তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
কথিত আছে, পাল রাজত্বের সময় দ্বারকা নদ ধরে বাণিজ্য করতে এসে সন্ধ্যা হয়ে আসায় তারাপীঠের জঙ্গলবেষ্টিত জায়গায় আশ্রয় নেন জয়দত্ত সওদাগর। জঙ্গলে এক বিষধর সাপ তাঁর পুত্র ধনঞ্জয়কে কামড়ে দেয়। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ধনঞ্জয়। এদিকে তাঁর সঙ্গে আসা মাঝিরা রান্না করার জন্য শোল মাছ কেটে জঙ্গলের একটি কুণ্ডে ধুতে গিয়ে দেখে, শোল মাছটি জোড়া লেগে কুণ্ডের গভীরে চলে গেল। ঘটনাটি তাঁরা সদাগরকে বলে। সেই মতো কলার ভেলাতে করে কুণ্ডের জলে ধনঞ্জয়ের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সারারাত ভেসে থাকার পর পরের দিন সূর্যোদয়ের মুহূর্তে ধনঞ্জয় বেঁচে ওঠে। এরপরই জয়দত্ত স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলা থেকে মায়ের শিলামূর্তি উদ্ধার করে কুণ্ড থেকে ঘট ভরে মায়ের নিত্যপুজোর ব্যবস্থা করেন। আর যে কুণ্ডের জলস্পর্শে সদাগরের ছেলে প্রাণ ফিরে পায় তার নাম হয় ‘জীবিতকুণ্ড’। জীবিতকুণ্ডের জলে দেবীর বিগ্রহকে স্নান করানো হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই কুণ্ডের জলস্পর্শে অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠে। পুণ্যার্থীরা মন্দিরে পুজো দিতে এসে এই জল মাথায় ছিটিয়ে আরোগ্য কামনা করেন।
এবার মন্দির কমিটির সহযোগিতায় এই জীবিতকুণ্ডকে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের জলাশয়ের আদলে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু করল টিআরডিএ। জীবিতকুণ্ডের জল বের করে দিয়ে জেসিবি মেশিন দিয়ে সংস্কার শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে গার্ড ওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, আগে মন্দির সংলগ্ন এই এলাকায় ঘন জঙ্গল ছিল। সূর্যের আলো পর্যন্ত প্রবেশ করত না। এই জীবিতকুণ্ডকে ঘিরে পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। আগে এই এলাকা চণ্ডীপুর নামে পরিচিত ছিল। জয়দত্তর ছেলে প্রাণ ফিরে পাওয়ার পর ‘তারা’ ‘তারা’ বলেছিল। তার থেকেই নাম হয় তারাপীঠ। তীর্থযাত্রীদের কাছে এই তারাপীঠকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে জীবিতকুণ্ডকে অক্ষত রেখে সংস্কারের কাজ চলছে। কুণ্ডের চারপাশে বাগান, নানা ধরনের আলো লাগিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা হবে। তীর্থযাত্রীদের বসার জায়গা ও যজ্ঞ করার ব্যবস্থা করা হবে। ওপরে হবে পুণ্যার্থীদের ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা। দিনে তো বটেই, সূর্য ডুবলেই এই কুণ্ড পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে। টিআরডিএর ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তারাপীঠ মন্দিরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হচ্ছে। যতদিন যাচ্ছে, ততই পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে। জীবিতকুণ্ড সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের ফলে মন্দিরের খোলামেলা পরিবেশ আরও বাড়বে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। তবে পুণ্যার্থীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে কুণ্ডের গভীরতা বাড়ানো হবে না। -নিজস্ব চিত্র