• সুযোগ বুঝে অন্যরাও বিমুখ, বকেয়া ২২ লক্ষ, নামে-বেনামে স্টল নিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন না তৃণমূল, বিজেপি নেতারা
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: তমলুক রেগুলেটেড মার্কেট কমপ্লেক্সে (আরএমসি) নামে-বেনামে স্টল নিয়ে দীর্ঘদিন ভাড়া মেটাচ্ছেন না তৃণমূল ও বিজেপির নেতারা। নেতাদের পথ অনুসরণ করে সাধারণ লিজ প্রাপকরাও ভাড়া দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। ফলে এই মুহূর্তে বকেয়ার পরিমাণ ২২লক্ষ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। বকেয়া ভাড়া আদায়ে স্টল প্রাপকদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন আরএমসির কর্মীরা। তাঁদের নোটিশও দেওয়া হচ্ছে। আবার, বেশ কয়েকজনের লিজ বাতিল করা হয়েছে। তমলুক পুরসভার ১৮নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলার কানাইলাল দাসের ভাড়া বাবদ বকেয়া এক লক্ষ টাকা ছাপিয়েছে। যেকারণে জেলাশাসক তথা আরএমসির চেয়ারম্যান তাঁর লিজ বাতিল করে দিয়েছেন। তাঁর স্টলটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু রায়, মনোজ হালদার, বিজেপির জেলা কমিটির মিডিয়া ইন-চার্জ সুরজিৎ বেরা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া ভাড়া মেটাচ্ছেন না। ২০১৪ সালে তমলুক পুরসভায় মেচেদা-হলদিয়া সড়ক সংলগ্ন শালগেছিয়ায় রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির ২২২টি স্টল তৈরি হয়। ১২০বর্গফুটের ওইসব স্টল দু’দফায় বিলি করা হয়। প্রথম দফায় ১০৪টি এবং পরবর্তীতে আরও ৯৬টি স্টল বিলি হয়। এভাবে মোট ২০০টি স্টল বিলি করা হয়েছে। মোট ৩৩বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। প্রথম দফায় বিলি হওয়া স্টল প্রতি মাসিক ভাড়া মাত্র ৮৫০টাকা। দ্বিতীয় দফায় বিলি হওয়া ৯৬টি স্টলের ভাড়া নির্ধারিত হয় ১০০০টাকা। তমলুক শহরের একাধিক তৃণমূল নেতা নামে-বেনামে স্টল নেন। কিছু স্টল বিলির পর বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আবার অনেক স্টলের লিজ প্রাপক নিয়ম ভেঙে ভাড়া খাটাচ্ছেন। যদিও নিজে ব্যবসা করার জন্য ওই স্টল দেওয়া হয়েছিল।

    করোনার সময় থেকে বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা নামে-বেনামে স্টল নিয়ে ঠিকমতো ভাড়া দিচ্ছেন না। যেমন, পুরসভার কাউন্সিলার কানাইলাল দাসের বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ এক লক্ষ টাকা। একাধিকবার নোটিশ পাঠানোর পরও কাজ হয়নি। তাই লিজ বাতিল হয়েছে। তবে, লিজ বাতিল করতেই হুঁশ ফিরেছে। বকেয়া মিটিয়ে তিনি স্টল পুনরায় লিজে পেতে চান বলে আরএমসির সেক্রেটারিকে চিঠি দিয়েছেন। জেলা তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু রায়ের বকেয়া ১২হাজার টাকা। দলের আরেক নেতা মনোজ হালদারের বকেয়া ১৪হাজার টাকা। বিজেপি নেতা সুরজিৎ বেরার নামে দু’টি স্টল রয়েছে। তাঁর বকেয়ার পরিমাণ ৪৬হাজার টাকা। নেতারা ঠিকমতো ভাড়া না দেওয়ায় তাঁদের দেখাদেখি অধিকাংশ স্টলের লিজ প্রাপকও ভাড়া নিতে অনিচ্ছুক। গোটা ঘটনায় প্রশাসনিক মহলে চর্চা তুঙ্গে। এনিয়ে পুরসভার কাউন্সিলার কানাইলাল দাস বলেন, ভাড়া বকেয়া থাকায় আমার লিজ বাতিল করা হয়েছে। তবে, আমি বকেয়া মিটিয়ে পুনরায় স্টলের লিজ পেতে আগ্রহী। সেজন্য আবেদনও করেছি। বিজেপির জেলা কমিটির মিডিয়া ইন-চার্জ সুরজিৎ বেরা বলেন, আমি স্টল খুলে ব্যবসা করে যাচ্ছি। ভাড়া অনিয়মিত হওয়ায় কিছু বকেয়া রয়েছে। বৃহস্পতিবার আমি ১০হাজার টাকা জমা করেছি।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির সেক্রেটারি শিবপ্রসাদ দাসঅধিকারী বলেন, তমলুক শহরে আমাদের স্টলের বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্য আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। নোটিশ পাঠানোর পাশাপাশি লিজ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছিল। ছ’জনের লিজ বাতিল হয়। যদিও তাঁরা বকেয়া মিটিয়ে পুনরায় লিজ পেতে আগ্রহী বলে আবেদন করেছেন। আমি এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছি।
  • Link to this news (বর্তমান)