• এসআইআরের দৌলতে ২৬ বছর পর সন্তানের হদিশ পেয়ে খুশি বাবা-মা
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: এসআইআর যেমন প্রাণ কেড়েছে, তেমনই ফিরিয়েও দিয়েছে অনেকের মূল্যবান সম্পর্ক। এই যেমন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার এক প্রবীণ দম্পতি ফিরে পেলেন ২৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তাঁদের একমাত্র ছেলেকে। 

    হাবড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত দত্ত চাষের কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী সান্ত্বনা দত্ত গৃহবধূ। তাঁদের একমাত্র ছেলে তরুণ। ওই দম্পতির আরও তিনটি মেয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সাল নাগাদ তরুণ তখন ধান ভাঙানোর ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় এক সময়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কি, বচসা হতে শুরু করে তরুণের। অভিমানে বাড়ি ছেড়ে চলে যান তরুণ। ছেলে যে এমন ঘটনা ঘটাবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারনেনি দত্ত দম্পতি। তাঁরা অনেক খোঁজুখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন। সেই ছেলেকে শেষপর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানা এলাকা থেকে। সেখানকার দর্জিপুরে দর্জির কাজ করেন তরুণ। বিয়ে করেছেন, পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তরুণ বললেন, বাড়ি ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্তটা খুব সহজ ছিল না। বাইরে খুবই কষ্ট করে জীবন কাটাতে হয়েছে। বহু রাত না খেয়ে কাটিয়েছি। এসআইআরের ফলে বাড়ির সদস্যদের খোঁজ পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে যাব। তাঁরা আমার জন্য অপেক্ষায় আছেন। বাবা ও মা ছাড়াও বোনদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

    বাড়ি ছাড়ার সময়ে তরুণ কোনও ডকুমেন্ট সঙ্গে নেননি। বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি দিল্লিতে থাকতে শুরু করেন। সেখানে ছোটখাটো কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। ৭ থেকে ৮ বছর দিল্লিতে থাকার পর তিনি রাজ্যে ফিরে এসে পিংলায় বসবাস শুরু করেন। তরুণের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানতেন না প্রতিবেশীরা। এদিকে হাবড়ায় দত্ত বাড়িতে তরুণের নামে এসআইআর ফর্ম এসে পৌঁছয়। সেই ফর্ম ফিল আপ করতে গিয়েই বিএলও ম্যাপিং করে জানতে পারেন তরুণ দত্তের নাম পিংলার ভোটার তালিকায় আছে। তারপরেই বিএলওর সাহায্যে ফোন নম্বর জোগাড় করে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রশান্ত দত্ত। তরুণের ছেলে অঞ্জন দত্ত পড়াশোনা করে। সেও ঠাকুরদা, ঠাকুরমার সঙ্গে কথা বলেছে। প্রশান্তবাবু ও  সান্ত্বনা দেবী জানিয়েছেন, তাঁরা সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুশি। পিংলার বাসিন্দা শ্যামলকান্তি দাস বলেন, সিনেমার মতো। এসআইআর বহু সম্পর্ক জুড়ে দিচ্ছে। এই জেলায় সুষ্ঠুভাবে এসআইআরের কাজ হয়েছে। তবে খুবই মানসিক চাপ ছিল কিছুদিন।পিংলা বিধানসভার বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন, সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুবই খুশি হবেন পরিবারের সদস্যরা। এসআইআর মানুষকে মানুষের সঙ্গে জুড়ে দিক। কিন্তু কেউ যাতে আলাদা হয়ে না যায়। কারণ, বিজেপির একটাই লক্ষ্য, মানুষকে মানুষের থেকে আলাদা করে দেওয়া। এসআইআরের ফলে বহু মানুষ টেনশনে মারাও গিয়েছেন।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)