• কোর্টের রায়ে স্বস্তি জেলার শিক্ষামহলে, শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে কয়েক হাজার স্কুল
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। কোর্টের সেই রায়ে স্বস্তিতে নদীয়া জেলার শিক্ষক মহল। কারণ, শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে নদীয়া জেলার বহু প্রাথমিক স্কুল। এই পরিস্থিতিতে ফের চাকরি বাতিল হলে জোর ধাক্কা খেত প্রাথমিক স্কুলগুলির পঠনপাঠন। গ্রামের দিকে বহু স্কুল শিক্ষকশূন্য হয়ে যেত। শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি, আদালতের রায় নেতিবাচক হলে নদীয়া জেলাতেই প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার শিক্ষক চাকরি হারাতেন। যার ফলে জেলার এক হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকের চরম ঘাটতি দেখা দিত। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোর্টের রায়ে সেই মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। 

    নদীয়া জেলার ডিপিএসসির চেয়ারম্যান দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে চালিয়ে নিয়ে যেতে আদালতের এই রায় স্বস্তিদায়ক। হঠাৎ করে হাজার হাজার শিক্ষক যদি চাকরি হারালে পঠনপাঠনে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ত। সেইদিক থেকে আমরা স্বস্তিতে। আদালত অবজার্ভেশনে জানিয়েছে যে, সকলের চাকরি গেলে অনেক সাদা মুখে কালি লেগে যাবে। সেটা একেবারেই কাঙ্খিত নয়। 

    কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি কিংশুক দাস বলেন, আমাদের সরকার সবসময়ে শিক্ষকদের পাশে রয়েছে। আদালতের এই রায় আমাদের সরকারের বড় জয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়াও সামাজিক দিক থেকেও আদালতের এই রায় তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল থাকলে বহু স্কুলে পড়াশোনার সমস্যা হতো। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। 

    কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের কনভেনার অমিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, নিরপরাধের শাস্তি কখনওই কাম্য নয়। হাইকোর্টের এই রায় মানবিক।‌ কিন্তু যাঁরা নিয়োগের দুষ্ট চক্র চালিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত জেলায় ভালো নয়। গ্রামের স্কুলগুলি শিক্ষকের ঘাটতিতে ধুঁকছে। তাই চাকরি বাতিল হলে গ্রামাঞ্চলে স্কুলগুলির সমস্যা হতো। প্রসঙ্গত, নদীয়া জেলায় ২৬৩৮টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। যেখানে জেলাজুড়ে প্রাথমিকে শিক্ষকের সংখ্যা ১০ হাজার ২৪৫। তারপরেও নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ, করিমপুর, তেহট্ট, চাপড়া, কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট, চাকদহ ব্লকের মতো প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলোর শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। অথচ শহরের স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই স্কুলগুলিতে ছাত্র শিক্ষকের এই ভারসাম্যহীনতা দীর্ঘদিন ধরে পঠনপাঠনের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছি। যেমন নদীয়া জেলাতেই অতিরিক্ত প্রায় ১৩০০ শিক্ষক রয়েছে। আবার একইসঙ্গে ১২০০ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। 

    যদিও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সম্প্রতি সেই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় যেখানে অতিরিক্ত শিক্ষক আছেন, সেখান থেকে শিক্ষকের ঘাটতি থাকা স্কুলে তাঁদের স্থানান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইমতো নদীয়া জেলাতেও শিক্ষকদের বদলির প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিস্থিতিতে আড়াই থেকে তিন হাজার শিক্ষক কমে গেলে পঠন-পাঠনে বড়সর প্রভাব পড়ত বলেই মনে করছে শিক্ষক মহল। কারণ, সে ক্ষেত্রে শিক্ষকের সংখ্যা এক লপ্তে কমে ৭০০০ থেকে ৮০০০ হয়ে দাঁড়াত। তখন জেলার আড়াই হাজারের বেশি স্কুলে শিক্ষক এবং ছাত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়ত।
  • Link to this news (বর্তমান)