নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামে হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শহর লাগোয়া এলাকার চারপাশে সৌরবিদ্যুৎ চালিত বেড়া দেওয়া হয়েছে। হাতি করিডোরে এআই ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এলিফ্যান্ট ট্র্যাকার্স টিম হাতি উপদ্রুত এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে। তার ফল হাতেনাতে মিলছে। কমছে প্রাণহানির সংখ্যা। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ এলাকায় ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে হাতির হানায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে মৃতের সংখ্যা সাত। বনবিভাগের এহেন তৎপরতায় জেলার বাসিন্দারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
ঝাড়গ্রাম জেলায় ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর, মেদিনীপুর ও রূপনারায়ণ বনবিভাগ রয়েছে। এই জেলায় ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ সবচেয়ে বড়। ১২টি রেঞ্জের মধ্যে ঝাড়গ্রাম ও লোধাশুলিতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ছিল। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগে গত কয়েক বছরে হাতির হানায় ১৫-২০জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝাড়গ্রামে গত বছর জুলাই মাসে ডিএফওর রদবদল হয়। তারপরেই সার্বিক চিত্রটা বদলে যেতে শুরু করে। জঙ্গল এলাকায় হাতির পছন্দের গাছপালা লাগানো হচ্ছে। জলাশয় খনন করা হচ্ছে। হাতি উপদ্রুত এলাকায় এলিফ্যান্ট ট্র্যাকার্স টিম নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে। হাতি করিডোরে এআই ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। হাতির পালের চলাচল বনবিভাগের অফিস থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। শহরলাগোয়া স্কুলগুলিতে সৌরবিদ্যুতের বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে। গ্ৰামে হাতি ঢুকলে রাতেও বনবিভাগের কর্মীরা পৌঁছচ্ছেন। এমনকি, দুর্ঘটনা এড়াতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারাও জারি করা হয়েছিল। জনবহুল এলাকায় যাতে হাতি চলাচল না করে, তার জন্য হাতির দলকে নতুন পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাতি চলাচলের নতুন করিডোর তৈরির চেষ্টা চলছে। জমিতে ফসল ফলার সময় গ্ৰামীণ এলাকায় সচেতনতা প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের এক আধিকারিক বলেন, পুকুরিয়া, নেদাবহড়া, ঘটিডুবা এলাকায় হাতির পাল ঢুকলেই দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের সঙ্গে খড়্গপুর বনবিভাগেও হাতির হানায় মৃত্যু কমেছে। ২০২২–’২৩ অর্থবর্ষে ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যাটা ১১। ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে তা কমে হয় ছয়। ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা পাঁচ। জেলায় হাতির হানায় মৃত্যু কমলেও বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বনবিভাগের কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি কীভাবে বদলানো যায়, তার চেষ্টা চলছে। খড়্গপুর বনবিভাগের ডিএফও মনীশ যাদব বলেন, হাতির হানা ঠেকাতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তারজেরেই হাতির হানায় মৃত্যু কমছে। বাড়িঘর ও ফসল রক্ষার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, বিষয়টি অল্পসময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের এক আধিকারিক বলেন, লাগাতার প্রচারে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে হাতি নিয়ে সচেতনতা এসেছে। এলাকায় হাতি ঢুকে পড়লে গ্ৰামবাসীরা খবর দিচ্ছেন। হাতির পাল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকছেন। ফলে হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা অনেকটাই কমেছে। ঝাড়গ্রামের পুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা সুভাষ মাহাত বলেন, হাতি নিয়ন্ত্রণে বনবিভাগের তৎপরতা বেড়েছে। আমরা স্বস্তিতে রয়েছি।