• বিজেপির বুথ সভাপতি খুনে ধৃত আরও এক তৃণমূল কর্মী
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ময়নায় বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া খুনের ঘটনায় ফের সক্রিয় হল এনআইএ। সোমবার থেকে ময়নার ক্যাম্প করে আছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির অফিসার-কর্মীরা। বুধবার রাতে বাকচা পঞ্চায়েতের গোড়ামহাল গ্রামের তৃণমূল কর্মী বুদ্ধদেব মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। তিনি পিংলায় আত্মগোপন করেছিলেন। তাঁর ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে বুদ্ধদেবের গোপন আস্তানায় হানা দেন এনআইএ অফিসাররা। রাত ৯টা নাগাদ বুদ্ধদেবকে গ্রেফতারের পর তার ছেলেকে বাড়িতে ছেড়ে দেয় এজেন্সি। এনিয়ে বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়া খুনের ঘটনায় মোট ১৭জন তৃণমূল নেতা-কর্মী গ্রেফতার হল। অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের খোঁজে হন্যে হয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে এনআইএ। ময়নায় এজেন্সির ক্যাম্প আরও কয়েকদিন থাকবে বলে জানা গিয়েছে।

    ওই খুনের ঘটনায় গত ১৯এপ্রিল বাকচা পঞ্চায়েতের চার তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে নোটিশ সাঁটিয়ে দিয়েছিল এনআইএ। তাঁরা হলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি মনোরঞ্জন হাজরা, অঞ্চল ও বুথ কমিটির নেতা বুদ্ধদেব মণ্ডল, কমল খুটিয়া ও স্বপন ভৌমিক। গত ২৫মে মনোরঞ্জন এনআইএ-র হাতে ধরা পড়েছেন। হুলিয়া জারি থাকা বাকি তিন নেতার হদিশ পায়নি এজেন্সি। তাঁদের খোঁজে গত সোমবার থেকে ময়নায় ক্যাম্প করে রয়েছে এনআইএ। বুধবার বুদ্ধদেব ধরা পড়েছে। এই মুহূর্তে এনআইএ কমল এবং স্বপনের খোঁজে জোর তল্লাশি চালাচ্ছে। 

    বৃহস্পতিবার সকালে তাঁদের মধ্যে একজন আত্মসমর্পণ করতে চায় বলে পরিবারের সদস্যরা এজেন্সিকে জানিয়েছেন। 

    ওই খুনের ঘটনায় গত ১৬জুলাই এনআইএ বাকচা গ্রাম থেকে তৃণমূল নেতা অমিতাভ ভঞ্জ ওরফে বাবু এবং সুজিত করকে গ্রেফতার করে। অমিতাভ তৃণমূলের ব্লক সহ সভাপতি ছিলেন। সুজিত বাকচা অঞ্চল তৃণমূলের সহ সভাপতি। খুনের ঘটনার পর থেকে তাঁরা গাঢাকা দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে দলের দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। বুধবার বুদ্ধদেবকে গ্রেফতারের পর ওই খুনের ঘটনায় মোট ১৭জন এনআইএ-র হাতে ধরা পড়ল। তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মী। কয়েকজন জামিনে আছেন।

    ২০২৩সালে ১মে ময়না থানার বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন গোড়ামহালে গ্রামে খুন হন বিজয়কৃষ্ণবাবু। তিনি বিজেপির গোড়ামহাল বুথ কমিটির সভাপতি ছিলেন। বোমা ছুড়ে ও গুলি করে খুন করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই ঘটনার তদন্তভার পায় এনআইএ। খুনের ঘটনায় মোট ৩৫জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। তালিকায় তৃণমূল কংগ্রেসের বাকচা পঞ্চায়েতের একচেটিয়া নেতা-কর্মীর নাম ছিল। কলকাতা সিটি সেশন কোর্টে ওই মামলা চলছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। মোট ১৭জন ধরা পড়েছে। বাকিরা গাঢাকা দিয়ে আছে। 

    বিজেপির ময়না-৩ মণ্ডল কমিটির সভাপতি উত্তম সিং বলেন, আমাদের বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণবাবুকে খুনের ঘটনায় তৃণমূল কর্মী বুদ্ধদেব ধরা পড়েছে। অভিযুক্ত আরও একজন এনআইএ-র কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায় বলে জেনেছি। এনিয়ে মোট ১৭জনকে এনআইএ গ্রেফতার করল। আমরা চাই, ওই খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রত্যেকের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নিক এনআইএ। 

    ধৃত বুদ্ধদেবের স্ত্রী সুমিত্রা মণ্ডল বলেন, বুধবার এনআইএ আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর রাতে ওর বাবাকে গ্রেফতার করেছে। রাত ২টা নাগাদ ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয় এনআইএ। আমার স্বামী ওই ঘটনায় জড়িত নয়। শুধুমাত্র তৃণমূল করার অপরাধে তাঁকে ওই খুনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)