৪ কোটি বিনিয়োগে ওয়ালেটে ১৮০ কোটি! ভুয়ো ইনভেস্টমেন্ট প্রতারণা, সল্টলেকে ধৃত যুবক
বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ফেসবুকে আলাপ এক তরুণীর সঙ্গে। মহিলার আশ্বাসে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্মে পৌনে চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন সল্টলেকের এক ব্যবসায়ী। অল্পদিনের মধ্যে উচ্চ রিটার্নের আশ্বাস দিয়েছিলেন তরুণী। মাস দু’য়েক পর ব্যবসায়ী দেখেন, বিনিয়োগ করা টাকা লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। সে সংখ্যা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ব্যবসায়ী। চার কোটি বিনিয়োগ করা টাকার ওয়ালেট ব্যালেন্স দেখাচ্ছিল, প্রায় ১৮০ কোটি টাকা! কিন্তু গোল বাধল পরে। সেই টাকা তুলতে পারলেন না ব্যবসায়ী। কারণ ব্যালেন্সে দেখানো টাকার অংকটি ভুয়ো! এরপর তিনি বুঝতে পারেন ফেসবুকে আলাপ হওয়া মহিলা আসলে প্রতারক। পুলিশে অভিযোগ জানান ব্যবসায়ী। তদন্তে নেমে এক যুবককে গ্রেফতার করে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানা। বুধবার রাতে হুগলি জেলার হরিপাল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম শ্যাম বাগ। প্রাথমিক তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ মিলেছে।
পুলিশের বক্তব্য, অনলাইনে ইনভেস্টমেন্ট ফ্রড বা বিনিয়োগের নামে প্রতারণা দিনের পর দিন বাড়ছে। কখনও ক্রিপ্টোকারেন্সি, কখনও হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম গ্রুপ খুলে অনলাইন শেয়ার ট্রেডিংয়ের টোপ দেওয়া হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত রিটার্নের টোপ দিচ্ছে প্রতাকরা। সেই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বহু মানুষ। ডিজিটাল অ্যারেস্ট, ব্যাংকের কেওয়াইসি আপডেট, লাইফ সার্টিফিকেট আপডেট, হোটেল বুকিং সহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার প্রতারণায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রবীণরাই প্রতারিত হন। কিন্তু দেখা গিয়েছে, এই ইনভেস্টমেন্ট প্রতারণায় বয়স্কদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের বহু ছেলে-মেয়েও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। শুধুমাত্র অনলাইনের ভরসায় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলছেন তাঁরা।
সল্টলেকের প্রতারিত ওই ব্যবসায়ীর বয়স ৪৪ বছর। ফেসবুকে তিনি তরুণীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেয়েছিলেন। মহিলা ধীরে ধীরে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করতে বলেন। ব্যবসায়ী যাচাই না করে তা বিশ্বাস করে ফেলেন। বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মটি আসলে ছিল ভুয়ো। ফেসবুকের মহিলার আশ্বাসে ১৭ জুলাই থেকে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন ওই ব্যবসায়ী। নিজের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং বন্ধু ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে আরটিজিএসের মাধ্যমে ৩ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা পাঠান। এরপর প্রতারকরা তাঁকে ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্মের একটি ভুয়ো ওয়ালেট ব্যালেন্স ইন্টারফেসে দেয়। দু’মাস পর সেপ্টেম্বরে তিনি ওই ওয়ালেট ব্যালেন্সে দেখেন, বিনিয়োগের অর্থ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। তিনি আট সেপ্টেম্বর তা থেকে কিছু পরিমাণ টাকা তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভুয়ো বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মের তরফে হোয়াটসঅ্যাপ সাপোর্ট টিম তাঁকে জানায়, লাভের উপর ১৫% ট্যাক্স দিতে হবে। সেই সঙ্গে আরও অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়। এরপর তিনি টাকা তুলতে পারেননি। মাথায় হাত পড়ে। বুঝতে পারেন, প্রতারকদের ফাঁদে পড়েছেন। ১০ সেপ্টেম্বর বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর হরিপালের যুবকটিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত এই প্রতারণার ঘটনায় ডিজিটাল কমিউনিকেশনের সঙ্গে যুক্ত। তার মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার কাছ থেকে একাধিক ডেবিট কার্ড, পাসবুক পাওয়া গিয়েছে। ধৃতকে পুলিশি হেপাজতে নিতে আবেদন জানানো হবে।