• অসহায় রূপান্তরকামী স্ত্রী এসডিওর দরবারে, বাংলাদেশি হয়েও ইনিউমারেশন ফর্ম স্বামীর!
    বর্তমান | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: বধূ নির্যাতনের মামলা চলছে। সেই পর্বেই শুরু হয়েছে এসআইআর। ‘বাংলাদেশি’ স্বামীর বিরুদ্ধে মহকুমা ও জেলা প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেন বারাসতের বাসিন্দা রাই চক্রবর্তী। স্বামী বাংলাদেশি হয়েও কীভাবে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করলেন তা নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হতেই পলাতক স্বামী অমিত ভট্টাচার্য। পাশাপাশি আত্মীয়রা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা রাই চক্রবর্তী। তিনি রূপান্তরকামী। ২০২২ সালে প্রেম করে রাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় অমিত ভট্টাচার্যর। সামাজিক বিয়ে হলেও তাঁদের রেজিস্ট্রি হয়নি। বেশ কয়েকমাস সংসার চলেছিল তাঁদের। অভিযোগ, বিয়ের ক’মাস পরেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন রাই। একপ্রকার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে বারাসত থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেন। পুলিশ অমিতকে গ্রেফতার করে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির পরিবারের অনুরোধে রাই অমিতের জামিন করান। কিন্তু বধূ নির্যাতনের মামলা এখনও বিচারাধীন আছে। মামলা এখনও প্রত্যাহার করেননি রাই। তবে, ২০২৩ সাল থেকে অমিত ও রাইয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। আইনত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি। তবে দু’জন আলদা আলাদা থাকেন। এই পর্বে রাই জানতে পারেন, স্বামী অমিত আসলে বাংলাদেশি। বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার খাগড়াছড়ি আনন্দনগর পানখাইয়া গ্রামে। বাংলাদেশ সরকারের পরিচয়পত্র রয়েছে অমিতের। কোভিডের সময় পরিবারের লোকজন বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন নেন। ভারতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকাকালীন তিনি অন্যকে বাবা-মা সাজিয়ে ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন বলে দাবি স্ত্রীর। রাইয়ের অভিযোগ, ২০২১ সালে চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে অমিত আসে। বারাসতের নবপল্লি এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে থাকত। পরে ভারতীয় নথি তৈরি করে। ২০২৪ সালে এদেশে ভোটও দিয়েছিল বলেই অমিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন স্ত্রী। এবার এসআইআর আবহে বারাসত বিধানসভার কালিকাপুরের ১৩২ নম্বর বুথ থেকে অমিত ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করে জমাও দিয়েছেন বলেই অভিযোগ রাইয়ের। বিষয়টি জানার পর বাংলাদেশি স্বামী অমিতের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করেছেন রাই। তিনি বলছেন, আমাদের প্রেম করে বিয়ে। নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে আমাকে বিয়ে করেছিল। এখন আমরা আলাদা থাকি। অমিত এলাকাতে নেই বলেই আমি জানি। তাঁর আরও দাবি, বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও অমিত এদেশের নাগরিকত্বের জন্য ইনিউমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছেন। এটা দেশের জন্য খারাপ। তাই, অভিযোগ জানিয়েছি। আগে আমি দেশবিরোধী কাজ ও তথ্য গোপনের মামলা করি। তারপর থেকেই সে পলাতক। কিন্তু তারপরও কীভাবে সে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করল বুঝতে পারছি না। এই প্রসঙ্গে বারাসত কালিকাপুর ১৩২ নম্বর বুথের বিএলও অসীম রায় বলেন, এনিয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। যা বলার প্রশাসনকে জানিয়েছি। অমিতের আত্মীয়দের দাবি, ও কোথায় আছে, কী করছে জানি না। এনিয়ে বারাসতের মহকুমা শাসক সোমা দাস বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। রিপোর্ট এলে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)