• চাকরির বিচারে তফাত গড়ল ‘নষ্ট’ OMR, প্রাথমিকের নিয়োগ ঘিরে ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে গুচ্ছ প্রশ্ন
    এই সময় | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • স্নেহাশিস নিয়োগী

    যত কাণ্ড ওএমআর ঘিরে!

    এসএসসি–র ২৬ হাজার আর প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরির বিচারে তফাত গড়ে দিলো কি শুধুই ওএমআর? কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষক–শিক্ষিকার চাকরি বহাল রাখার পরে এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের অন্দরে। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে দুটি ক্ষেত্রে শিক্ষক–শিক্ষিকা নিয়োগে বিস্তর অনিয়ম হওয়ায় সিবিআই–ইডি তদন্ত হয়েছিল। নিয়োগ দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের একগুচ্ছ প্রাক্তন কর্তা জেল খেটেছেন, কেউ কেউ এখনও খাটছেন। অথচ দুটি স্তরে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের আলাদা আলাদা রায়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। তার পিছনেও রয়েছে সেই ওএমআর।

    প্রাথমিকে ৩২ হাজার নিয়োগের তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ২০১৪–র প্রাথমিকের টেট পরীক্ষার ওএমআর হাতেই পায়নি। আদালতে তারা দাবি করে, ২০১৬ –র শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল প্রকাশের আগেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সেই ওএমআর ওডিশার এক সংস্থাকে দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। যদিও এসএসসি–র ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে উল্টো চিত্র। কমিশন ২০১৯ পর্যন্ত স্কুলে স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের কাউন্সেলিংয়ের পরে নিজেদের সার্ভারে থাকা ওএমআর নষ্ট করেছিল ঠিকই, কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমে লিখিত পরীক্ষার মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থা নায়সার কর্মী পঙ্কজ বনশালের গাজিয়াবাদের বাড়ি থেকে দুটি হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে সিবিআই। তাতে পরীক্ষায় বসা ২২ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর সিংহভাগের ওএমআর সংরক্ষিত ছিল। এরপর এসএসসি–র সার্ভার রুম সিজ করে ওএমআর কপি বা মিরর ইমেজ না পেলেও সিবিআই–এর হাতে এসেছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ২০১৬–র লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর। যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে সহজেই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল, শিক্ষাকর্মীদের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগে ওএমআরে প্রাপ্ত নম্বরে বিস্তর মিস ম্যাচ হয়েছিল।

    বিকাশ ভবনের এক কর্তা হাইকোর্টের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের রায়ের পরে বৃহস্পতিবার জানান, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের উদ্ধার করা সেই ওএমআরগুলি গুরুত্বও দিয়েছিল। কিন্তু কোনও ভেদাভেদ করেনি। বরং বিচারপতিরা জানিয়েছিলেন, চাল থেকে কাঁকড় আলাদা করা যাচ্ছে না। তাই পুরো প্যানেল খারিজ করে আবার নতুন করে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সিবিআইয়ের উদ্ধার করা সেই ওএমআর–কে বিশ্বাসও করেননি, আবার গুরুত্বও দেননি। অথচ টেন্টেড ও আন–টেন্টেড বিভাজন করেছিলেন। সে জন্য বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি সঞ্জয় কুমার সম্প্রতি হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন, একজন যোগ্যও যাতে বঞ্চিত না হয়, সেটা যেন আদালত অবশ্যই নিশ্চিত করে।

    যদিও কমিশনের আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ উদ্ধার হওয়া ওএমআর–কে বিশ্বাস না করলেও তার ভিত্তিতে কয়েক বছর ধরে কর্মরত ০, ২, ৩ পাওয়া শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আদালতের দুটি স্তরে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের ক্ষেত্রে দু’রকম রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে। অবশ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বুধবার বলেন, ‘ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে স্পষ্ট ২০১৬–র নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। পর্ষদের নিয়ম ও বিধি মেনে নির্দিষ্ট সময়েই ওএমআর নষ্ট করা হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরে এই বিভাজন অবান্তর।’

    প্রাথমিক এবং এসএসসি উভয় ক্ষেত্রেই বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তর কথায়, ‘এসএসসির ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের ওএমআর উদ্ধারের বিষয়টি নিয়োগ দুর্নীতি প্রমাণের দরজা হাট করে খুলে দিয়েছিল। আমজনতা দেখেছে আসলে শূন্য, দুই, তিন পেয়েও অযোগ্যরা কী ভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। তবে প্রাথমিকে সেই কাজ সিবিআই করতে পারেনি। এমনকী, আদালতও এসএসসি–র দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ডকুমেন্টস প্রকাশে কমিশনকে বাধ্য করেছিল। সিবিআই সে ক্ষেত্রে পার্টিও ছিল। কিন্তু প্রাথমিকের ক্ষেত্রে সেটা যে কোনও কারণেই হয়নি।’

  • Link to this news (এই সময়)