ভাইয়ের চিকিৎসার নামে টাকা তোলেন আখতার! আর জি কর দুর্নীতি মামলায় দাবি সিবিআইয়ের
প্রতিদিন | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
অর্ণব আইচ: অসুস্থ ভাইয়ের চিকিৎসা ও ঋণের টাকা মেটানোর নাম করে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা তোলেন আখতার আলি। আর জি করের আর্থিক দুর্নীতি মামলার চার্জশিটে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে সিবিআই। একই সঙ্গে চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, ‘ঘুষ ও কাটমানি’র যাবতীয় টাকা স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেই পাঠাতেন আখতার আলি। আখতারের বিরুদ্ধে পেশ করা চার্জশিটে তিনি কাশ্মীরি বেগমের অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েক দফায় টাকা পাঠিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, এই কাশ্মীরি বেগমই আখতার আলির স্ত্রী।
এদিকে, সিবিআইয়ের দাবি, সন্দীপ ঘোষ ও আখতার আলির মধ্যে ছিল অত্যন্ত বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু ‘ক্ল্যাশ’ বা সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরই সন্দীপ ঘোষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে শুরু করেন আখতার আলি। আর জি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির চার্জশিটে সিবিআই স্পষ্ট জানিয়েছে যে, যখনই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলির ‘সংঘর্ষ’ তথা দ্বন্দ্ব শুরু হয়, তখনই তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে সন্দীপ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। ইতিমধ্যেই সন্দীপ ঘোষ ও তাঁর চারজন ঘনিষ্ঠকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। অথচ এই আখতার নিজেই কীভাবে সন্দীপ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ভেন্ডরদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতেন, সেই চিত্রও সিবিআই চার্জশিটে তুলে ধরেছে।
গত সোমবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আর জি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় আখতার আলি ও শশীকান্ত চন্দকের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। চার্জশিট অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সন্দীপ ঘোষ যোগ দেওয়ার অনেক আগে থেকেই অন্য ভেন্ডরদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে আখতার আলি টাকা তুলতে শুরু করেছিলেন। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্তার কাছ থেকে জোর করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা ব্যাঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ী আখতারের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে পাঠান। সন্দীপ ঘোষ আর জি করে যোগ দেওয়ার আগেই সামগ্রিক দুর্নীতির ‘উপাদান’ ছিলেন আখতার আলি। সন্দীপ ঘোষ আর জি করের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার পর আখতার আলি তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে নিজের অফিসেই দুই ভেন্ডর বিপ্লব সিংহ ও সুমন হাজরার সঙ্গে মিলে ‘কোটেশন’ সংক্রান্ত দুর্নীতি করেন। তার বদলে সন্দীপের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই আখতার আলি সুবিধা নেন।
চার্জশিটে রয়েছে, একটি বেসরকারি সংস্থা ই টেন্ডারের মাধ্যমে ২০২০ সাল থেকেই আর জি করে মেডিক্যাল সামগ্রী সরবরাহ করত। ওই সংস্থাটিকে আখতার আলি ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বরাত দেন। ওই সংস্থার মালিক সিবিআইকে জানান, আখতারের জন্যই তাঁর টাকা পাওয়ার রাস্তা মসৃণ হয়ে যায়। ওই টেন্ডারের বদলে অসুস্থ ভাইয়ের চিকিৎসা ও ঋণ মেটানোর নাম করে আখতার ব্যবসায়ীকে ২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা দিতে বলেন। ওই টাকা ব্যবসায়ী একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কয়েক দফায় আখতারের স্ত্রীর নামে পাঠান। ওই টাকা আখতার তাঁকে আর ফেরত দেননি। এ ছাড়াও এক ব্যবসায়ী আখতার আলি ও তাঁর পরিবারের ভ্রমণের জন্য ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। ওই ব্যবসায়ীর সংস্থার নামে ভুয়া কোটেশন তৈরি করা হয়েছিল। এই দুর্নীতিতেও দুই ভেন্ডর বিপ্লব সিংহ ও সুমন হাজরা জড়িত ছিলেন বলে চার্জশিটে জানিয়েছে সিবিআই।