বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম
ডিসেম্বর মাস পড়তেই গুটি গুটি পায়ে পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রামে। ঝাড়গ্রামের অন্য দ্রষ্টব্যগুলির সঙ্গে পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে লাল মাটির হাট। ৭ ডিসেম্বর থেকে প্রতি রবিবার ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্র পার্কে বসতে চলেছে লাল মাটির হাট। শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির হাটের আদলে তৈরি এই হাট এ বারে পঞ্চম বর্ষে পা রাখল। ফি রবিবার বসা এই হাট চলবে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রবিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জঙ্গলমহলের হস্তশিল্পের প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবাসায়ীদের লক্ষ্মীলাভের আশাতেই চালু হয়েছে এই হাট।
এখানে মেলে জঙ্গলমহলের মেয়েদের হাতে তৈরি গয়না, ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী, আদিবাসী সমাজের মহিলাদের পঞ্চিপাহাট শাড়ি। স্থানীয় খাবারের পসরাও কিছু কম বসে না। অনেকেই নিয়ে আসেন শালপাতায় মোড়া পোড়া মাংসের পিঠে আর ডুমু পিঠে। ঝাড়গ্রাম বেড়াতে আসা পর্যটকেরা মূলত বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর ও চিল্কিগড় বেড়াতে যান। দু'দিনের মধ্যেই তাঁদের বেড়ানো প্রায় শেষ হয়ে এলে বিকেলবেলায় লাল মাটির হাটে ভিড় জমান তাঁরা। সেই হাটে কেনাকাটা এবং জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া করার পরে অনেকেই রাতের ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরে যান। কেউ আবার রাতটা ঝাড়গ্রামেই কাটিয়ে পরের দিন ফিরতি পথ ধরেন।
বুধবার এই হাটকে সামনে রেখে রবীন্দ্র পার্ক থেকে ধামসা মাদলের বোলের সঙ্গে ছৌ নাচের তালে পদযাত্রায় শামিল হন লাল মাটির হাটের সদস্যরা। হাটের অন্যতম সদস্য প্রধান বসুর কথায়, 'পর্যটকেরা ঝাড়গ্রামে বেড়াতে এলে এই হাট থেকে তাঁদের পছন্দমতো জিনিস কেনাকাটা করেন। পাশাপাশি এখানে যে ট্রাইবাল খাবার মেলে, তাও আজকাল ওঁদের রসনাতৃপ্তি ঘটাচ্ছে।' তাঁর সংযোজন, 'ঝাড়গ্রামে বেড়াতে এসে এই লাল মাটির হাট যেমন পর্যটকদের বাড়তি পাওনা, তেমনই এই হাটের মাধ্যমে কয়েকশো মহিলাও স্বনির্ভর হচ্ছেন।'
প্রধান জানান, পর্যটকদের আরও বিনোদনের জন্য এই হাটের সঙ্গে জুড়েছে আদিবাসী নৃত্য ও জঙ্গলমহলের নানা সংস্কৃতির নাচ-গান। এ বছর থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, 'লাল মাটির হাট চালু হওয়ার পর থেকে ঝাড়গ্রামে পর্যটকদের বেড়ানোর তালিকায় একটি নতুন ডেস্টিনেশন যোগ হয়েছে। এই হাট দেখার জন্য আগে থেকে ইটিনেরারি প্ল্যান করেই অনেকে আসছেন।'