• শীতে খেজুর গুড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়য় এই গুড়!
    আজকাল | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শীত নামতেই মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা ব্লকে একের পর এক চালু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী আখের গুড়ের মিল। উর্বর জমি ও নদী ঘেরা পরিবেশে আখের চাষ বেশি হওয়ায় বহু বছর ধরেই দেশের সেরা গুড় উৎপাদন হয় এই দুই ব্লকে। তবে এই  বছর আখের ফলন কিছুটা কম হওয়ায় মিলগুলি চালু হতে কিছুটা দেরি হয়েছে। অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া  গুড়ের মরশুম এবার চলবে ফেব্রুয়ারি–মার্চ পর্যন্ত। আখ চাষিরা জানিয়েছেন, এক বিঘা আখ চাষে খরচ পড়ছে ২০–২৫ হাজার টাকা। কিন্তু  ফলন কম হওয়ায় কৃষকদের লাভও কমেছে।

    এর ফলে, গত বছরের তুলনায় গুড়ের দাম কেজি প্রতি ৬০–৭০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০–৯০ টাকা  পর্যন্ত। জোগান কম ও উৎপাদন খরচ বাড়ায় বাজারে আগামী দিন মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত এই আখের গুড়ের দাম আরও বেশ কিছুটা বাড়তে পারে বলেই গুড় প্রস্তুতকারকরা মনে করছেন। সাদ্দাম হোসেন নামে এক  আখের গুড় প্রস্তুতকারী বলেন, "প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরও গুড়ের যথেষ্টই চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বর্ষা বেশিদিন থাকায় আখ চাষের খুব ক্ষতি হয়েছে। তাই আমাদের চড়া দামে আখ কিনতে হচ্ছে। ফলে সেই আখ থেকে তৈরি গুড়ের দামও আমরা বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।" তিনি বলেন, "পার্শ্ববর্তী জয়রামপুর, ভবানীপুর, শংকরপুরের মতো এলাকা থেকে আখ নিয়ে আসা হয় এই অঞ্চলে। তারপর সেই আখ থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু আখের গুড়। খেজুরের গুড়ের মতো আখের গুড় থেকেও পাটালি গুড় তৈরি করা হয়। প্রচুর চাহিদা রয়েছে।" এই গুড়ে কোনও কৃত্তিম রং বা গন্ধ ব্যবহার করা হয় না বলেই তাঁর দাবি। 

     সামশেরগঞ্জ ব্লকের চুয়াপুর এলাকার একটি আখ মিল থেকে গুড় কিনতে আসা ওসমান শেখ নামে এক ক্রেতা জানিয়েছেন, "প্রত্যেক বছরই এখান থেকে গুড় কিনে নিয়ে যাই। দেশী আখ থেকে তৈরি এই গুড় স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।"তাঁর কথায়, "আখ দু'রকমের হয়- বোম্বাই আখ এবং দেশি আখ। সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা ব্লকের বিভিন্ন মিলে কেবলমাত্র দেশি আখ থেকেই গুড় তৈরি হয়। আর এই শীতের মরসুমে পাঁচমাসই কেবলমাত্র এই গুড় পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এখানে গুড়ে কোনওরকম  ভেজাল দেওয়া হয় না। তাই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে হলেও আমরা এখান থেকেই সবসময় গুড় কিনে নিয়ে যাই ।"

    বলাই বাহুল্য এই সময় মিল এলাকাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়—আখ পেষাই, কড়াইয়ে রস ফুটে ওঠা, আর চারদিকে ভেসে বেড়ায় টাটকা গুড়ের গন্ধ। স্বাদ, রং ও গুণমানে অতুলনীয় হওয়ায় সামশেরগঞ্জ–ফরাক্কার গুড়ের চাহিদা আজও রাজ্য জুড়ে অপরিবর্তিত। তাই দাম যতই বাড়ুক না কেন আসন্ন বড়দিন - ইংরেজি নতুন বছরের আগে বাড়িতে বাড়িতে পিঠে, পুলি, পায়েস তৈরির জন্য আখের গুড়ের চাহিদা আরও বাড়বে বলেই আশাবাদী গুড় প্রস্তুতকারীরা।
  • Link to this news (আজকাল)