• ডলার অস্ত্রে রাশিয়া বধের চেষ্টা ব্যর্থ! মোদিকে পাশে নিয়ে টাকা-রুবলে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ পুতিনের
    প্রতিদিন | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে ‘একঘরে’ করতে চেয়েছিল আমেরিকা। চাপানো হয়েছিল SWIFT নিষেধাজ্ঞা। সেই নিষেধাজ্ঞাকে ব্যর্থ করতে ভারতের সঙ্গে জোট বেঁধেছে রাশিয়া। ডলার নির্ভর অর্থনীতিকে দুরমুশ করতে দেশীয় মুদ্রায় ভারত-রুশ বাণিজ্যে এসেছে জোয়ার। শুক্রবার যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে সে কথাই জানালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জানালেন, ভারত-রুশ বাণিজ্যের ৯৬ শতাংশ আর্থিক লেনদেন ৯৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।

    শুক্রবার যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ সকল ভারতীয়দের ধন্যবাদ জানাই এমন উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য। এর পাশাপাশি পুতিন জানান, ভারতকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে প্রস্তুত রাশিয়া। তাঁর কথায়, “জ্বালানি ক্ষেত্রে উভয় দেশই ব্যাবসা করে সন্তুষ্ট। তাই তেল-গ্যাসের সেই ব্যাবসাকেই আবার আগের মতোই করে তুলতে চাই। আমরা একেবারে নির্বিচ্ছিন্ন ভাবে ভারতকে তেল পাঠাতেও প্রস্তুত রয়েছি।” এছাড়াও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একে অপরের হাত শক্তিশালী করে সামরিক চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও রাশিয়া উভয়েই উভয় দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র ব্যবহার করতে পারবে। মহাকাশ, কৃত্রিম মেধার পাশাপাশি ভারতে পরমাণু কেন্দ্র তৈরিরে সাহায্যের বার্তা দেওয়া হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছে রাশিয়া।

    তবে এই সবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দুই দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্র। এদিন রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারত ও রাশিয়ার লেনদেন পৌঁছে গিয়েছে ৬৪ বিলিয়ন ডলার। শীঘ্রই এই অঙ্কটা পৌঁছে যাবে ১০০ বিলিয়ন ডলারে।” একইসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট জানা এই বাণিজ্যের ৯৬ শতাংশই হয়েছে দেশীয় মুদ্রায় অর্থাৎ ভারতের টাকা ও রাশিয়ার রুবেলে মাধ্যমে। অর্থাৎ ডলারকে পাশ কাটিয়ে দেশীয় মুদ্রায় লেনদেনের ক্ষেত্রে জোয়ার এনেছে দুই দেশ। যা আমেরিকার ডলার অস্ত্রকে কড়া জবাব বলেই মনে করা হচ্ছে।

    উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ভাতে মারতে বিশেষ কৌশল নিয়েছিল আমেরিকা। রাশিয়ার উপর ব্যবহৃত হয় আমেরিকার চেনা অর্থনৈতিক অস্ত্র SWIFT। কিন্তু কী এই SWIFT? SWIFT অর্থাৎ Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication. নাম থেকেই বোঝা যায়, বিশ্বজুড়ে আর্থিক আদানপ্রদানের একটি মাধ্যম এই সিস্টেম। যাতে মেসেজের মাধ্যমে সহজে লেনদেন করা যায়। বিশেষত এই মাধ্যম খুব সুবিধাজনক সীমান্ত এলাকায় লেনদেনের ক্ষেত্রে। ১৯৭০ সালে ইউরোপীয় দেশগুলি মিলে সীমান্ত বাণিজ্য সহজ করার জন্য তৈরি হয়েছিল এই প্ল্যাটফর্মটি। লক্ষ কোটির বাণিজ্যিক লেনদেন হয় এর মাধ্যমে। এবং খুব সহজে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলি বাদে রাশিয়াও SWIFT ব্যবহার করে থাকে আমদানি-রপ্তানির জন্য। এই সুবিধা থেকে পুতিনের দেশকে বঞ্চিত করা হয়।

    এর জেরে বড় ধাক্কা খায় রাশিয়ার রপ্তানি বাণিজ্য। রাশিয়ার তৈরি সামগ্রী বিদেশি কোনও সংস্থা কিনতে চাইলে তাদের অনেক বেশি ব্যয় করতে হত, সেখানে SWIFT-এ খরচ ছিল তুলনামূলকভাবে কম। মূলত রুশ গ্যাস ও খনিজ তেলের রপ্তানিতে ধাক্কা দিতে এই পদ্ধতি নেওয়া হয়। তবে ডলার নির্ভর SWIFTকে পাশ কাটিয়ে দেশীয় মুদ্রায় বাণিজ্যে জোর দেয় রাশিয়া। এই পথে রাশিয়াকে সঙ্গ দেয় ভারত-চিনের মতো দেশ। ডলার এড়িয়ে দেশীয় মুদ্রায় চলে বাণিজ্য। এবার সেই মার্কিন চোখ রাঙানিকে ফুৎকারে উড়িয়ে পুতিন জানালেন, ভারতের সঙ্গে ৯৬ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়েছে রুবেল ও টাকায়।
  • Link to this news (প্রতিদিন)