ব্রিটিশ-বিরোধী ভারতের প্রথম বিদ্রোহিনী, ‘অরণ্যবহ্নি রানি শিরোমণি’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ প্রকাশ
প্রতিদিন | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: প্রকাশিত হতে চলেছে ‘মেদিনীপুরের রানি লক্ষ্মীবাই’ নামে খ্যাত কর্ণগড়ের রানি শিরোমণিকে নিয়ে বিশেষ গ্রন্থ– ‘অরণ্যবহ্নি রানি শিরোমণি’। বৃহস্পতিবার কলকাতায় এই ১৯ জন গবেষক, লেখক ও ইতিহাসবিদের প্রবন্ধ নিয়ে সংকলিত গ্রন্থটির প্রচ্ছদ উদ্বোধন করেন প্রাক্তন সাংসদ-সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক কুণাল ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন রানি শিরোমণি নিয়ে বিশেষ গবেষক তীর্থঙ্কর ভকত, কর্নেল গোলা আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির সভাপতি দুলাল দত্ত-সহ মেদিনীপুর থেকে আসা প্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য, এই পুজো কমিটির উদ্যোগেই গ্রন্থটি প্রকাশ হচ্ছে। বাড়িতে পড়ে গিয়ে পা ভাঙায় অস্ত্রোপচারের পর আপাতত বাড়িতে থাকা কুণালের ঘরেই প্রচ্ছদের উদ্বোধন হয়। বইটির সম্পাদনা করেছেন মেদিনীপুরের পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা রানি শিরোমণির গবেষক বিনোদ মণ্ডল।
ঝাঁসির রানির লড়াইয়ের ৬০ বছর আগেই কর্ণগড়ে রানি শিরোমণিই ছিলেন ভারতে প্রথম ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহিনী। চুয়াড় কৃষক বিদ্রোহে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্রিটিশ-বিরোধী এই লড়াইয়ের কাহিনি দীর্ঘদিন পর ১৯৯৭ সালে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ প্রথম বিস্তারিত তুলে ধরেন সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে কুণালের সঙ্গে নদী পেরিয়ে কর্ণগড়ে গিয়ে রানি শিরোমণিকে শ্রদ্ধা জানান সিপিএমের দুই নেতা অনিল বিশ্বাস ও বিমান বসু। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু আপ্তসহায়ক জয়কৃষ্ণ ঘোষকে দিয়ে মহাকরণে ডেকে পাঠিয়ে কুণালের কাছ থেকে রানির বিস্তারিত কাহিনি জেনে নেন। পরবর্তীতে মেদিনীপুর শহরে শিরোমণির বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ প্রকাশিত খবরের তথ্য বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন প্রয়াত জ্যোতি বসু। আর প্রথমবার রেলমন্ত্রী হয়েই ‘রানি শিরোমণি এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্ণগড়ে রানির মন্দির ও দুর্গ সংস্কার-সহ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি রানি শিরোমণিকে রাজ্যের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী। সেই প্রক্রিয়াও চলছে। বস্তুত, এমনই নানা ঘটনার কথা কুণালের ঘরে গ্রন্থের প্রচ্ছদ প্রকাশের ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আলাপচারিতায় উঠে এসেছে। সেখানেই গবেষক তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, “ভারতের প্রথম ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহিনী রানি শিরোমণির অবদান সামনে আনতে নানা সময়ে, নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। রানির লড়াই, সংগ্রামের পাশাপাশি গত তিন দশকের নানা ঘটনার কথা এই গ্রন্থে লেখা থাকবে। জানুয়ারি মাসে স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি রানি শিরোমণিকে নিয়ে তৈরি এই ঐতিহাসিক দলিলটি প্রকাশিত হবে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুজো কমিটির সহ-সভাপতি জগন্নাথ দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বুবাই দাস, সঞ্জয় ভকত, সৌমেন খান, অরুণ সাঁতরা, নিসর্গ নির্যাস মাহাতো প্রমুখ।