গত আট বছরে অনেক ওঠাপড়া দেখেছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক একই খাতে, একই ভাবে বয়ে চলেছে। কোনও পরিবর্তন হয়নি। শুক্রবার হায়দ্রাবাদ হাউসে সেই ‘বন্ধুত্বের’ কথাই শোনা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে। তবে শুধু স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ নয়, অর্থনৈতিক গাঁটছড়াও বাঁধতে চলেছে দুই দেশ। নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, ২০৩০ পর্যন্ত ইকোনমিক কোঅপারেশন প্রোগ্রাম চালাবে দুই দেশ।
এ দিন পুতিনের প্রশংসা করে রাশিয়াকে ‘নর্থ স্টার’ বলে উল্লেখ করেন মোদী। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে দুই দেশের পার্টনারশিপকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। গত আড়াই দশকে পুতিন তাঁর নেতৃত্ব এবং দূরদৃষ্টি দিয়ে এই সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।’ এর পরেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বন্ধু সম্বোধন করেন তিনি। মোদীর কথায়, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন আমার বন্ধু। এই বন্ধুত্ব এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
এর পরেই ভারত-রাশিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে নতুন প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে মোদী বলেন, ‘ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিই আমাদের অগ্রাধিকার। তার জন্যই ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছি আমরা।’
রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়েই আমেরিকার সঙ্গে বিবাদ নয়াদিল্লির। ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ ট্যারিফ চাপিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রাশিয়া জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখবে বলেই এ দিন জানিয়েছেন পুতিন। তার পরেই মোদী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে জ্বালানি সরবরাহ করে আসছে রাশিয়া। এটা আমাদের অংশীদারিত্বে শক্তিশালী স্তম্ভ হিসাবে কাজ করছে। পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রাশিয়ার। গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা ও নির্ভরযোগ্য সাপ্লাই চেন বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।’
এ দিন ইউক্রেন সংঘাতে শান্তির বার্তাও দেন প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি জানিয়েছেন, ভারত নিরপেক্ষ নয়, শান্তির পক্ষে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই দিল্লি জানিয়ে এসেছিল, ভারত শান্তির পক্ষে। মোদীর কথায়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যতটা চেষ্টা করা হচ্ছে, তাতে আমি নিশ্চিত, বিশ্ব ফের শান্তির দিশা খুঁজে পাবে।’
২০০১ সালে মোদী ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন তিনি। এ দিন পুতিনকে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, ‘আমাদের ২৫ বছরের চেনাজানা।’ তখনই ভারত-রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারিত্বের এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল বলে দাবি করেন মোদী।