রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনীতি সরগরম। দেশের অভ্যন্তরেও শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক। বৃহস্পতিবারই তাঁকে বিদেশি অভ্যাগতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছিলেন রাহুল গান্ধী। শুক্রবার রাতে পুতিনের সম্মানে আয়োজিত হাই-প্রোফাইল রাষ্ট্রীয় নৈশভোজেও আমন্ত্রণ জানান হলো না লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল বা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কাউকেই। বদলে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে মোদী সরকার আমন্ত্রণ জানাল সাংসদ শশী থারুরকে।
কোনও বিদেশি অভ্যাগতর সম্মানে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন হলে লোকসভা বা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা বা প্রধান বিরোধী দলের প্রধন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রথা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে কংগ্রেসের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতাকে এড়িয়ে শশী থারুরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ব্রাত্য থাকলেও তিনি এই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। যদিও তাঁকে এখন আর কংগ্রেস সাংসদ বলা যায় কিনা, তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে।
গত ছয় মাস ধরে দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি দলের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীতি বা পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। একই সময়ে তািনি নিন্দা করেছেন পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির। যে আক্রমণের নিশানা স্পষ্টতই রাহুল গান্ধী। দলের সঙ্গে ক্রমে বাড়ছে তাঁর মতানৈক্য।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, BJP-র দিকে এক পা বাড়িয়েই রেখেছেন শশী থারুর। এই অবস্থায় রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গেকে এড়িয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও শশী থারুরের দাবি, মোদী সরকারের এই আমন্ত্রণের পিছনে রাজনীতি খোঁজা ঠিক নয়। তিনি সংসদের বিদেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। সেই পদমর্যাদার সৌজন্যেই তাঁকে এই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রাহুল গান্ধী বা মল্লিকার্জুন খাড়গের ক্ষেত্রে কেন একই সৌজন্য দেখানো হলো না? এই প্রশ্নের উত্তরে কৌশলী জবাব দিয়েছেন থারুর, ‘রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে আমন্ত্রণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানি না।’
এই ঘটনার ঠিক একদিন আগেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বিরোধীদের দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন রাহুল গান্ধী। সংসদের বাইরে তিনি মনে করিয়ে দেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানার কথা।
রাহুল বলেন, ‘বাজপেয়ী সরকারের সময়ে ঐতিহ্য ছিল, সফররত বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দেখা করতেন। কিন্তু এখনকার সরকার চায়, বিদেশি নেতারা যেন বিরোধীদের সঙ্গে দেখা না করেন।’
পুতিনের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে দেশের লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং বৃহত্তম বিরোধী দলের সভাপতিকে আমন্ত্রণ না জানানো, রাহুলের এই অভিযোগকেই আরও জোরালো করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। এখন দেখার বিষয় একটাই, শশী থারুরের এই নৈশভোজে যোগদান কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন কোনও সমীকরণ তৈরি করবে কি?