প্রসেনজিৎ সরদার: স্ত্রীকে নিজের হাতে খুন করেছি! মায়ের কাছে স্বীকারোক্তি ছেলের! আর ছেলের মুখে একথা শুনে চমকে উঠলেন মা। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড়ের কালিকাপুর গ্রামে। মৃতের নাম মৌমিতা নস্কর (২১)। এই ঘটনার পরই অভিযুক্ত স্বামী দেবাশীষ নস্করকে গ্রেফতার করেছে ভাঙড় থানার পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় চার বছর আগে ঘুটিয়ারি শরীফ এলাকার বাসিন্দা মৌমিতার সঙ্গে কালিকাপুরের দেবাশীষের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চলছিল। স্ত্রী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন— এই সন্দেহ থেকেই প্রায়ই অশান্তি বাঁধত। বৃহস্পতিবার রাতে সেই অশান্তি চরমে ওঠে। অভিযোগ, দেবাশীষ প্রথমে স্ত্রী মৌমিতাকে বেধড়ক মারধর করেন। এরপর রাতের অন্ধকারে তাঁকে ঘটকপুকুর খালপাড়ে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে খুন করেন। পরে দেহ লোপাট করতে কচুরিপানায় ভর্তি খালে ফেলে দেন।
প্রতিবেশীরা বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেবাশীষকে আটক করে। এরপর ডুবুরি নামিয়ে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালিয়ে খাল থেকে মৌমিতার দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ভাঙড় থানার পুলিশ। আর তাতেই উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য
নিজের স্ত্রীকে খুন করে মায়ের কাছে স্বীকারোক্তি ছেলের। ভালবাসাকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই ভালোবাসাই বার বার ধোঁকা দিচ্ছিল বলে নিজের স্ত্রীকে খুন করে সে। মায়ের কাছে এমনটাই দাবি দেবাশীষ নস্করের। বৃহস্পতিবার রাতে মৌমিতার সঙ্গে দেবাশীষের তুমুল বচসা হয়। রাস্তার উপরই দেবাশীষকে একাধিকবার মারধর করে মৌমিতা। বার বার এই অপমান সহ্য করতে না পেরেই স্ত্রী মৌমিতাকে সে খুন করেছে বলে মাকে জানায় দেবাশীষ।
দেবাশীষের কথা অনুযায়ী, এর আগেও একাধিকবার মৌমিতা নস্কর নিজের স্বামী-সন্তান ছেড়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। এই নিয়ে থানায় মীমাংসা হয়েছিল। সে সময় মৌমিতাকে তার বাপের বাড়ির সদস্যরা নিয়ে গিয়েছিল। দু সপ্তাহ আগে নিজের বাচ্চা মেয়ের কথা ভেবে দেবাশীষ ঘুটিয়ারি শরীফে গিয়ে মৌমিতাকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু বাড়িতে এসেও পুনরায় একই ঘটনা ঘটাচ্ছিল মৌমিতা। নিজের সম্মান বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে ঘটকপুকুর খালপাড় এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিল দেবাশীষ। সেখানেও বারে বারে অপমানিত হওয়ার কারণেই সে মৌমিতাকে খুন করেছে বলে তার মাকে জানায় দেবাশীষ।
ছেলের এই কুকীর্তির কথা মা জানতে পেরেই প্রতিবেশীদের জানায়। তারপরই পুলিসে খবর যায়। খবর পেয়ে পুলিস এসে ঘটকপুকুর খাল থেকে উদ্ধার করে মৌমিতা নস্করের মৃতদেহ। ওদিকে খুনের ঘটনায় দেবাশীষকে গ্রেফতার করে বারুইপুর মহাকুমা আদালতে পেশ করে পুলিস।