• ‘নকল করে গাওয়াকে সঙ্গীত বলা যায় না, গুরুর কাছে শিক্ষা নিতে হয়’, কলকাতায় এসে আর কী বললেন পরবীন সুলতানা
    আনন্দবাজার | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বয়স সংখ্যা মাত্র। তার প্রমাণ পরবীন সুলতানার দরাজ কণ্ঠ। শুক্রবার কলকাতায় এসেছিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী। স্পষ্ট জানালেন, সঙ্গীতকে শুধুই সঙ্গীত হিসাবে কখনও ভাবেননি। সঙ্গীত তাঁর কাছে প্রার্থনা। এই প্রার্থনা তিনি আজীবন চালিয়ে যেতে চান।

    অসমের গায়িকা বরাবর কলকাতাকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি ভেবে এসেছেন। বাংলা ছবি ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’-তে ‘বেঁধেছি বীণা গান শোনাব’ গানটি গেয়েছিলেন। কলকাতা এলেই বরাবর ধর্মতলার নিউ মার্কেট ও পার্কস্ট্রিটে যান। তাই এই শহর তাঁর খুব কাছের। কলকাতার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা মনে করে তিনি বলেন, “কলকাতা সব সময়ই খুব সাংস্কৃতিক একটি শহর। ক্রিকেট থেকে গান— সব ভাল। কবিগুরু এই শহরের। এই শহরের সবকিছুই আমার ভাল লাগে। আমাকে অনেক ভালবাসা দিয়েছে কলকাতা।”

    বর্তমানে বাংলার সঙ্গীত নিয়েও তিনি ইতিবাচক। আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকা়ডেমি-র ৫৪তম অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ঠিক আগে বর্ষীয়ান গায়িকা বলেন, “বাংলার নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের সঙ্গীত তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখে তবেই গান গাইছেন। যে কোনও ধরনের গান গাইতে গেলেই আগে শাস্ত্রীয়সঙ্গীতটা শিখতেই হবে। শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শিখলে তবেই কণ্ঠ পোক্ত হবে। তার পরে তো যে কোনও গান গাওয়াই যাবে।”

    উঠতি সঙ্গীতশিল্পীদের সমালোচনা না করে উৎসাহ দিতে হয় বলে মনে করেন পরবীন সুলতানা। তাঁর কথায়, “আমাদের সংস্কৃতিটা ওদের বোঝাতে হবে। ভাল করে গানটা শেখানো দরকার। আমরাও সেই একই চেষ্টা করছি। কিছুটা হয়তো সফলও হয়েছি।”

    সরাসরি গুরুর থেকে শিক্ষা নেওয়া সবচেয়ে জরুরি বলে মত তাঁর। তিনি বলেন, “আসলে কাউকে নকল করে গান গাওয়াকে সঙ্গীত বলা যায় না। লতাজির গান ৩০০ বার শুনে গাইলেই সেটা গান হয়ে যায় না। এর মধ্যে কোনও প্রতিভা নেই। এ ভাবে যারা গান শিখছে, তাদের বলব, গুরুর কাছে গিয়ে শিক্ষা নাও। গানটা আগে ঠিক করে শেখো। গানটা ভাল করে শিখে নকল করলে, সেটা শুনতেও ভাল লাগে।”

    এই প্রসঙ্গে অজয় চক্রবর্তী জানান, ভারতের দুটি রাজ্যের নতুন শিল্পীরা শাস্ত্রীয়সঙ্গীতে বিশেষ স্থান অর্জন করছে— পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্র। শিল্পী বলেন, “এই দুই রাজ্য থেকে সবচেয়ে প্রতিভাবান শাস্ত্রীয়সঙ্গীত শিল্পীরা উঠে আসছেন। মহারাষ্ট্রের থেকেও কলকাতা কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে, আমি হলফ করে বলতে পারি। তবে অনেকেই শাস্ত্রীয়সঙ্গীত নিয়ে বলেন, ‘গানগুলি তো জনপ্রিয় নয়’। মেলায় তো সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় পাঁপড়ের দোকানে। কিন্তু সেখানে বই, হাতে আঁকা ছবি, মার্বেল ইত্যাদি ভাল জিনিসেরও দোকান থাকে। সেখানে কম ভিড় দেখা যায়। জনপ্রিয় মানেই কোনও কিছু ভাল হতে পারে না। সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও, একটা গান হয়তো খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু সেখানে শেখার কিছুই নেই। গান শেখা কতটা জরুরি, সেই দিক থেকেই সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি নিজেদের বার বার প্রমাণ করেছে।”

    উল্লেখ্য, আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি-তে তিন দিন ধরে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। প্রথম দিন গান গাইলেন পরবীন সুলতানা। শনিবার ও রবিবার অনুষ্ঠানে থাকবেন অজয় চক্রবর্তী, অশ্বিনী দেশপাণ্ডে, কস্তুরী যোশী, ওমকার দাদারকার।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)