• ডিমেলো হাউস: গোয়ার পর্তুগিজ ইতিহাসের অভিশপ্ত প্রাসাদ আজও টানে রহস্যপ্রেমীদের
    বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সৌগত গঙ্গোপাধ্যায়, মারগাও: ফাতোরদা স্টেডিয়াম থেকে স্কুটারে মিনিট কুড়ির পথ। দক্ষিণ গোয়ার রাইয়া গ্রামের সান্তিমোল বসতি অঞ্চল। কিছুটা এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল পরিত্যক্ত একটি পর্তুগিজ হাভেলি। সাদা-ধূসর রঙের জীর্ণ দেওয়াল। চারদিকের জঙ্গল আর লতাপাতা যেন বাড়িটিকে গিলতে চাইছে। ভাঙা কাঠের মূল গেট। পাথরের উঠোনে পুরোনো গাছের শিকড় ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। সমুদ্রের হাওয়ায় বাড়ি থেকে অদ্ভূত ফিসফিস শব্দ ভেসে আসছে। সেলুলয়েড ছবির মতো ভীতি ও কৌতূহলের মিশেলে মন অস্থির করতে বাধ্য। পাশের রাস্তায় এক মধ্যবয়স্ক হেঁটে যাচ্ছিলেন। নাম বিনয় গাঁওকর। তাঁকে প্রশ্ন করতেই রহস্যের উদঘাটন হল। আসলে এটাই সেই গোয়ার সবচেয়ে ভূতুড়ে ও রহস্যময় বাড়ি ডিমেলো হাউস।

    স্থানীয়দের মতে, পর্তুগিজ শাসনকালে ডিমেলো পরিবার এই বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি করে। বাড়িটির কাঠের সূক্ষ্ম কাজ ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যে পরিপূর্ণ। এটি প্রজন্মান্তরে পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে চলে আসে। সেই সময় এই প্রাসাদ উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ জীবনের প্রতীক ছিল। এই বাড়িতে দুই ভাই জোসেফ ও জোয়াও ডিমেলো থাকতেন। একটা সময় সম্পত্তি নিয়ে তাঁদের মধ্যে তীব্র বিরোধ বাঁধে। এবং লোভে-ক্রোধে একে অপরকে হত্যা করেন। এই ভয়াবহ ঘটনা বাড়িটিকে অভিশপ্ত করে বলে বিশ্বাস স্থানীয়দের। ভাইদের মৃত্যুর পর নাকি ডিমেলো পরিবারের আত্মীয়রা সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের অপঘাতে মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই এই বাড়ি ফাঁকা। কেউ এসে থাকার সাহস করেননি। এই অভিশপ্ত বাড়িতে স্থানীয়রা রাতের বেলা অদ্ভূত চিৎকার, বাতাসে ভাসমান কণ্ঠস্বর ও অদৃশ্য পায়ের শব্দ মাঝেমধ্যেই নাকি শুনতে পান। ডিমেলো হাউসেরই পাশের বাড়ির মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলছিলেন, ‘কিছু একটা তো আছেই। মাঝে মধ্যে রাতের দিকে অদ্ভূত আওয়াজ আসে। তবে কিছু ক্ষতি কোনওদিন করেনি।’  স্থানীয়রা ডিমেলো হাউসকে গোয়ার সবচেয়ে কুখ্যাত ভূতুড়ে স্থান মানেন। তবে এই বাড়ি শুধু গোয়ার ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায় নয়, একই সঙ্গে পর্তুগিজ স্থাপত্য ও সংস্কৃতির স্মৃতি। স্থানীয় পর্যটন দফতর এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলো বাড়ির সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে এই রহস্যময় জায়গাটিকে এক পর্যটন ও ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়। ডিমেলো হাউস শুধুমাত্র ইতিহাসপ্রেমী নয়, রহস্যসন্ধানী ভ্রমণকারীদের জন্যও এক অনন্য অভিজ্ঞতা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)