• চূড়ান্ত তালিকাতেও বিহারে ৫ লক্ষাধিক ভুয়ো ভোটার! অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টে
    বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো? বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিস্ফোরক অভিযোগ করল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)। শীর্ষ আদালতে এই এনজিও-র দাবি, বিহারে এসআইআরের কাজ শেষ হয়ে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই সংশোধিত তালিকায় পাঁচ লক্ষাধিক ‘ডুপ্লিকেট’ বা নকল ভোটারের নাম থেকে গিয়েছে। অর্থাৎ ‘ভূত’ তাড়ানোর ‘মহাযজ্ঞ’ সত্ত্বেও সেই কাজে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। এডিআরের এই দাবির প্রেক্ষিতে কমিশনের আইনজীবীকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অভিযোগের মোকাবিলা করতে পালটা নথি তৈরি রাখুন। বিহারে সংশোধিত তালিকাতেই বিধানসভা ভোট হয়েছে। ফল প্রকাশের পর নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে পাঁচ লক্ষাধিক নকল ভোটার নিয়ে এডিআরের তোলা বিস্ফোরক অভিযোগে স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল তুঙ্গে।

    প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে এডিআরের হয়ে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি বলেন, অন্যতম আবেদনকারী যোগেন্দ্র যাদব গত অক্টোবর মাসে আদালতে ডুপ্লিকেট ভোটারদের নাম সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশন পেশ করেছিলেন। কিন্তু বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, সেখানে সেইসব নকল ভোটারের নাম থেকেই গিয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, অবাক করার মতো বিষয় হল, হাতে নকল রোধী সফটওয়্যার থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করার অবস্থানে কমিশন অনড় ছিল। সেই সফটওয়ার ব্যবহার করা হলে হয়ত চূড়ান্ত তালিকা থেকে এই পাঁচ লক্ষাধিক ডুপ্লিকেট নাম বাদ দেওয়া সম্ভব হত। বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরেই স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে চূড়ান্ত তালিকায় নাম তোলা বা বাদ দেওয়া হয়েছে, সেবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতেই চায়নি কমিশন। প্রশান্ত ভূষণের এই অভিযোগ শোনার পর কমিশনের আইনজীবী একলব্য দ্বিবেদীকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এই বিষয়গুলি নিয়ে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। আপনাদের নথিগুলি তৈরি রাখুন। এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে যেসব নিয়ম কানুন বানিয়েছিল, কমিশন সেগুলি সতর্কতার সঙ্গে পালন করেছে কি না, তা দেখাতে হবে। আদালতের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আইনজীবী দ্বিবেদী বলেন, নিয়ম-কানুন ও বিধি সংক্রান্ত তথ্য জানাতে কমিশন আগেই হলফনামা পেশ করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই যে কাজ চলছে, হলফনামায় তা-ও জানানো হয়েছিল।

    শুধু ডুপ্লিকেট ভোটারের নাম থেকে যাওয়া নিয়ে অভিযোগ জানিয়েই থেমে থাকেননি প্রশান্ত ভূষণ। সুপ্রিম কোর্টে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, এসআইআর প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ছিল ভোটার তালিকা থেকে বিদেশি ও বেআইনি পরিযায়ীদের নাম বাদ দেওয়া। কিন্তু ভোটারের নাগরিকত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার সাংবিধানিকভাবে কমিশনের নেই। কারও নাগরিকত্ব নিয়ে বিএলওর যদি সন্দেহ হয়, তাহলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারে কমিশন। সেই ব্যক্তি যদি হলফনামা পেশ করে দাবি করেন তিনি ভারতীয় নাগরিক, তাহলে সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কমিশন নিজে কোনও ব্যক্তির নাম ভোটার            তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে না। আদালতে আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সংশোধিত হওয়ার সুযোগও থাকে সেই ব্যক্তির কাছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)