সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: মনরেগা ইস্যুতে সংসদে শেষ দেখে ছাড়বে তৃণমূল। সেই মতো লাগাতার গত তিনদিন বাংলায় বকেয়ার দাবিতে সরব হওয়ার পর এবার খোদ গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে মুখোমুখি বসতে চাইছে তৃণমূলের ১০ সাংসদ। জলজীবন মিশনেও বকেয়া মেটানোর দাবিতে জলশক্তিমন্ত্রী সি আর পাতিলের সঙ্গেও সংসদ চলাকালীন বসতে চাইছে তারা। মুখোমুখি বসে দাবি আদায়ে চাপ দেওয়া হবে। দলের পক্ষে চাওয়া হচ্ছে মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।
কলকাতা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও কেন এখনও ফের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে আরম্ভ হচ্ছে না, প্রশ্ন তো রয়েইছে। তারই সঙ্গে তৃণমূলের অভিযোগ, সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বলছেন মন্ত্রী। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক গত মঙ্গলবার লোকসভায় লিখিতভাবে জানিয়েছে, ২০২২ সালের ৯ মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গে মনরেগার কাজ বন্ধ। সেই মতো বকেয়ার পরিমাণ ৩ হাজার ৮২ কোটি টাকা। যদিও তৃণমূলের দাবি, বকেয়া ৫২ হাজার কোটি টাকা।
সেই মতো শুক্রবার সংসদ চত্বরে বিক্ষোভে বড় বড় করে ৫২ হাজার লেখা পোস্টার হাতে সোচ্চার হয় তৃণমূল। দলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, গত তিন বছর ধরে রাজ্যের ৫৯ লক্ষ গরিবের কাজ কেড়ে নিয়েছে মোদি সরকার। এখনকার হিসেবে বকেয়া ৫২ হাজার কোটি টাকাই। আদালত বলার পরেও কেন আটকে রেখেছে কেন্দ্র? উত্তর একটাই, বিজেপি বাংলা বিরোধী। মনরেগার বিষয়ে রাজ্যসভাতেও এদিন সরকারকে চেপে ধরতে তৈরি ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। শুক্রবার তাঁর মৌখিক প্রশ্ন তালিকাবদ্ধ ছিল। ন’ নম্বরে। কিন্তু প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রথম আটটিতেই সময় শেষ।
এটি ইচ্ছাকৃত বলেই অভিযোগ করেন ডেরেক। সংসদ চত্বরে বলেন, শিবরাজ সিং চৌহান মনরেগা ইস্যুতে তৃণমূলের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন। সেই কারণেই আমার প্রশ্নটি যাতে না আসে তার জন্য অহেতুক আগেরগুলিতে অনেক সময় নিয়ে জবাব দিলেন। তবে এভাবে আমাদের এড়াতে পারবে না বলেও কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছে বলেন, এবার মুখোমুখি সাক্ষাৎ করব। দেখি কী
করে এড়ান। রাজ্যে বিনিয়োগ ইস্যুতেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। এক বিলের জবাবি ভাষণে সুযোগ পেয়ে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বিভিন্ন কোম্পানি বাংলা ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলেই ছিল তাঁর মন্তব্য। তারই প্রতিবাদে সংসদকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করেছে তৃণমূল। একইভাবে সুযোগ পেয়ে রাজ্যসভায় দলের মুখ্য সচেতক নাদিমুল হক বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে সাত হাজার নতুন কোম্পানি নথিভুক্ত হচ্ছে।
দাবির স্বপক্ষে সংসদে দেওয়া মোদি সরকারের গত ১১ আগস্টের তথ্যকে অস্ত্র করেছে তৃণমূল। যেখানে সরকারই লিখিতভাবে জানিয়েছিল, গত পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ৪৪ হাজার ৪০টি কোম্পানি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। নিজেদের অফিস সরিয়ে নিয়েছে ১ হাজার ৭৪২টি কোম্পানি। বাংলায় নথিভূক্ত কোম্পানি রয়েছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার ৩৪৩। তাহলে কীসের ভিত্তিতে বাংলার বদনাম? সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।