• বিজেপিকে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদানের পরই ত্রিপুরায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির অনুমতি গাজিয়াবাদের ট্রাস্টকে
    বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আগরতলা: দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট। সেটাই কি না পুরোদস্তুর অফিস ইরা সোশ্যাল চ্যারিটেবল ট্রাস্টের! গাজিয়াবাদের এই সংস্থাই ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিল বিজেপিকে। অভিযোগ, এরপরই ত্রিপুরায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির অনুমতি দেওয়া হয় ওই ট্রাস্টকে। রাজধানী শহর আগরতলা থেকে প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার দূরে, উত্তর ত্রিপুরা জেলার তিলথাই গ্রামে তৈরি হয়েছে সেই ‘আর্যাবর্ত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’। বরাদ্দ ১৮ হাজার বর্গমিটার জমি। নামে ‘আন্তর্জাতিক’ হলেও সেখানে পড়ুয়াদের জন্য সাধারণ কোনও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। ক্যাম্পাসে যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত ভাঙা। গত বছর অক্টোবরে পড়ুয়াদের একটি দল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। কোন নিয়ম মেনে ওই প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে, ইউজিসির ছাড়পত্র রয়েছে কি না—তা প্রকাশ্যে আনার দাবি জানানো হয়। সেই সময় ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর গুঞ্জন বনসল এবং প্রো-চ্যান্সেলর দীপক বনসলের সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। তারপর বিষয়টি নিয়ে খোঁজাখুঁজি করতেই একের পর এক অনিয়মের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।

    ২০২৩ সালে তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হওয়ার আগে ওই ট্রাস্টটি ৩০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয় বিজেপিকে। এছাড়া, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রমনকুমার রোশন ও চ্যান্সেলর গুঞ্জনও দিয়েছিলেন ১০ লক্ষ টাকা করে। ২০২৩ সালে বিধানসভা ভোটে জিতে দ্বিতীয়বার ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসে বিজেপি। ওই বছরই বিধানসভায় আর্যাবর্ত ইউনিভার্সিটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিল পাশ হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হওয়ার পর কেন্দ্র ও ত্রিপুরার একাধিক মন্ত্রী, বিধানসভার স্পিকার সেখানে গিয়েছেন।

    ইরা সোশ্যাল চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নিয়েও একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৫ সালে ট্রাস্টটি নথিভুক্ত হয়। সদস্য হিসেবে গুঞ্জন ও রমনের নাম ছিল। কিন্তু গাজিয়াবাদের বিহার নগর এলাকার যে ঠিকানায় ট্রাস্টের নথিভুক্তি, সেটি আদতে দু’কামরার ফ্ল্যাট। বাইরে ট্রাস্টের সাইনবোর্ড থাকলেও ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে রয়েছে একটি পরিবার। পরিবারের সদস‌্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা তিন বছর ভাড়া থাকলেও মালিক সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে গুঞ্জন ও রমন আরও দু’টি ট্রাস্ট খুলেছিলেন। তিনটি ট্রাস্টের নথি একই। কাজের পরিধি সম্পর্কে সরকারি খাতায় হুবহু একই কথা লেখা। ২০১৫ সালে তৈরি হওয়া একটি ট্রাস্টের সদস্যরা কীভাবে ২০২৩ সালের মধ্যে ত্রিপুরার শীর্ষ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ পাতিয়ে ফেললেন? এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।

    আর্যাবর্ত ইউনিভার্সিটির স্বীকৃতি, সরকারি সহায়তা এবং ট্রাস্টের সঙ্গে বিজেপির যোগ সম্পর্কে ত্রিপুরা সরকারের কাছে একাধিক লিখিত প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি। বরং সেই সব প্রশ্ন পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্য নির্বাচনি আধিকারিকের (সিইও) দপ্তরে। স্বাভাবিকভাবেই সিইও দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, তাদের এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)