আমেরিকার রক্তচক্ষু উড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করায় জোর মোদি ও পুতিনের
বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: ভারতকে জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়া। সেক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা আসার সম্ভাবনা নেই। রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল ক্রয় করা যাবে না বলে মার্কিন ফতোয়া উড়িয়ে দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ভারত সফরে এসে তিনি বলেন, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সব ধরনের বাণিজ্য এবং সামরিক সহায়তা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এমনকি ভারতের সঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে চুক্তি আগে হয়েছে, সেই চুক্তিকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। প্রয়োজনীয় রিঅ্যাক্টর উপকরণ তো বটেই, বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রেও সবরকমভাবে সাহায্য করবে রাশিয়া।
পুতিন বলেন, নরেন্দ্র মোদি আমার বিশেষ বন্ধু। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্ব বহু বছরের পুরোনো। মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্তচক্ষু নিয়েও তোপ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমেরিকার তো তাদের বিদ্যুৎ শক্তির জন্য জ্বালানি কেনে রাশিয়া থেকে। আমেরিকা জ্বালানি কিনলে সেটা দোষের নয়! আর ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনলে সেটা অপরাধ!
পুতিনের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে নরেন্দ্র মোদি নিজেই যৌথ বিবৃতিতে উত্থাপন করেছেন ইউক্রেন প্রসঙ্গ। বিশ্ববাসীর উদ্দেশে মোদির বার্তা, ইউক্রেন নিয়ে যখন, যেভাবে ঘটনাক্রম গড়িয়েছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট পুতিন আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাঁকে বলেছি যে, আমরাও চাই দ্রুত শান্তি ফিরুক। মোদি বলেন, আমি আন্তর্জাতিক মহলকে স্পষ্ট করে দিয়েছি যে, ভারত কোনও পক্ষেই নেই। ভারত শুধু শান্তির পক্ষে। প্রসঙ্গত, ইউক্রেন নিয়ে ভারত যাতে রাশিয়ার সমালোচনায় সরব হয়, তার জন্য ক্রমাগত চাপ বাড়িয়েছে আমেরিকার ও পশ্চিমী দুনিয়া। কিন্তু মোদি সেই পথে হাঁটলেন না। তিনি রুশ প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ২০০০ সাল থেকে পুতিন যেভাবে দেশ চালাচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষা করছেন, তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট—তিনি একজন অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক। মোদি ও পুতিনের এই উষ্ণ মৈত্রীর বার্তা যে ট্রাম্পের রক্তচাপ বাড়াবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ মোদি বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত ও রাশিয়ার বাণিজ্য স্পর্শ করবে ১ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে! এই অবিশ্বাস্য অংক অবশ্যই আরও ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ করবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে কমানোর বদলে শুক্রবার পুতিন ও মোদি একযোগে বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য একগুচ্ছ সমঝোতাপত্র তৈরি হয়েছে। এমনকি ভারত একটি আন্তর্জাতিক করিডর তৈরি করবে। যার প্রধান অংশীদার হবে রাশিয়া!
রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। রাষ্ট্রপতি ভবনে সর্বোচ্চ গার্ড অফ অনার। হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এবং ১ লক্ষ কোটি ডলারের বাণিজ্য রোডম্যাপ। রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজে সমাপ্ত হল পুতিনের
সফর। এবার অপেক্ষা ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়ার! কারণ এত কিছুর পর কি ট্রাম্প চুপ করে থাকবেন? মনে হয় না!