অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের ঠিক আগেই কৃষ্ণনগরে সিএএ শুনানির গতি বাড়াল কেন্দ্র। বাংলায় এসআইআর চালু হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন। বিজেপির প্রতি তাঁদের ভরসার জায়গা বেশ খানিকটা নড়ে গিয়েছে। মতুয়া অধ্যুষিত কিছু এলাকায় পুঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ। এমতাবস্থায়, মতুয়াদের ভেঙে যাওয়া মন জোড়া দিতে একমাত্র সিএএ অস্ত্র হতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্ট সব মহলের। সেই মতো নদীয়া জেলায় সিএএ শিবিরগুলিকে চাঙ্গা করতে অতি সক্রিয় হয়েছেন গেরুয়া শিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাতে আবেদনের চাপ ক্রমশই বাড়ছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সামনে রেখেই সেই সব আবেদনের শুনানি প্রক্রিয়ায় গতি আনতে তৎপর কেন্দ্র। শুনানির জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে কৃষ্ণনগর হেড পোস্ট অফিস।
সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামী ২০ ডিসেম্বর রানাঘাটে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে রানাঘাট ‘মতুয়াগড়’ বলে পরিচিত। এসআইআর চালু হতেই এখানকার বহু মানুষ উৎকণ্ঠার প্রহর গুণছেন। ইতিপূর্বেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরনগরে গিয়ে পদযাত্রা ও সভা করে এসেছেন। মতুয়াদের উদ্দেশ্যে অভয়বার্তাও দিয়েছেন তিনি। সেই প্রেক্ষিতে মোদির সভার জন্য রানাঘাট নির্বাচন বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই কৌশলের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে সিএএ। প্রধানমন্ত্রী মতুয়াদের ক্ষোভ প্রশমনে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টির উপর জোর দিতে পারেন বলে রাজনীতির কারবারিদের মত। এমনকী, সভামঞ্চে এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে, যা মতুয়াদের মনজয়ে সহায়ক ভূমিকা নেয়। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ-সভাপতি রঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘আমরা সিএএ শিবিরের উপর জোর দিয়েছি। যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ নাগরিকত্বের কার্ডের পান।’
জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার সিএএ আবেদনকারীর শুনানি বাকি। মাত্র ২ হাজার জনের শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। আবেদনের অতিরিক্ত চাপ সামলাতেই হেড পোস্ট অফিসেও বসবে শুনানির টেবিল। সেখানে নিয়োগ করা হবে নতুন অফিসার। থাকবেন আইবি’র অফিসাররাও। তবে, এই গোটা প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে যুক্ত করেনি কেন্দ্র। তা নিয়ে তুমুল বিতর্কও দানা বেঁধেছে।
এতদিন শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের সুপারিনটেনডেন্ট অফিসেই সিএএ শুনানি হত। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ জন আবেদনকারীর সঙ্গে কথা বলতেন অফিসাররা। এসআইআর চালু হওয়ার পর আবেদনের হার ক্রমশ বাড়তে থাকে। সেই চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছিল না। ডাক বিভাগের এক কর্তা জানান, এখন প্রতিদিন গড়ে ৪২টি আবেদনের শুনানি হচ্ছে। এবার হেড পোস্ট অফিসেও শুনানি হবে। বাইরে থেকে অফিসার এসে আবেদনকারীদের কথা শুনবেন। শুনানি প্রক্রিয়ায় গতি আনতেই এই ব্যবস্থা। চলতি বছরের মে-জুন মাস থেকে নদীয়া জেলায় শুরু হয়েছে সিএএ’র শুনানির প্রক্রিয়া। যাঁরা শুনানিতে আসছেন, তাঁদের বেশিরভাগই আড়াই থেকে তিন মাস আগে আবেদন করেছিলেন। শুনানিতে হলফনামা জমা দিতে হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে আগত বলে উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য নথিপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হচ্ছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শংসাপত্রও। কিন্তু যথা সময়ে নাগরিকত্ব কার্ড আবেদনকারীরা পাবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এরমধ্যেই গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো চালু হয়ে গিয়েছে এসআইআর। জেলায় গেরুয়া-মরুদ্যান বলে পরিচিত এলাকাগুলি থেকে বহু মানুষের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রবণতা কপাল ভাঁজ ফেলেছে বিজেপি নেতাদেরও। বিশেষ করে মতুয়াদের নিয়ে তাঁদের চিন্তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে এনে নতুন করে নাগরিকত্ব প্রদানে বিজেপি জিগিড় তুলবে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, ‘ভোটের আগে মানুষকে ভুল বোঝাতে সিএএ নামক গাজর ঝোলাচ্ছে বিজেপি।’