এবার প্রতারকদের জালে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের চার কর্মাধ্যক্ষ ও এক পদাধিকারী
বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের চার কর্মাধ্যক্ষ এবং এক পদাধিকারীকে দীর্ঘক্ষণ ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখল সাইবার প্রতারকরা। প্রত্যেককে বলা হয়, দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে এক অভিযুক্তর বাড়ি থেকে আপনাদের আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। কাউকে আবার বলা হয়, জঙ্গিরা আপনার নামে সিমকার্ড তুলে দিল্লিতে হামলা করে। আচমকাই এমন কথা শুনে কারও ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়, আবার কারও সুগার কমে যায়। কেউ আবার তড়িঘড়ি থানায় ছোটেন। সেই ফোন পাওয়ার পর এখনও কারও কারও আতঙ্ক কাটেনি। ‘ডিজিটাল’ অ্যারেস্ট বলে কিছু নেই। ফোন করে এভাবে কাউকে গ্রেফতার করে রাখা যায় না। এজাতীয় প্রচার লাগাতার করা হচ্ছে। তারপরও পদাধিকারীদের বেশ কিছুক্ষণ ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখতে সক্ষম হয় সাইবার অপরাধীরা। যদিও কারও অ্যাকাউন্ট তারা সাফ করতে পারেনি।
এক পদাধিকারী বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে মেমারি-২ ব্লকে তৃণমূলে পার্টি অফিসে বসেছিলাম। আচমকাই অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। তা রিসিভ করতেই আমার নাম ধরে ওপার থেকে বলা হয় ‘আপনি কখনও মুম্বই গিয়েছিলেন? সেখানে হোটেলে ছিলেন? প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরই বলে আপনার আধার কার্ড দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডে অভিযুক্তর বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে। আপনাকে জেরা করা হবে। জেরা পর্বে অন্য কারও ফোন তুলতে পারবেন না। নির্দেশ না মানলে অসুবিধা হবে। ওই পদাধিকারী বলেন, ঘাবড়ে গিয়ে ওদের নির্দেশ মানতে থাকি। ওরা এনআইএ লেখা একটি নথি পাঠায়। তাতে আমার নাম অভিযুক্ত হিসেবে লেখা ছিল। কিছুক্ষণ পর বলে, আপনার একটি অ্যাকাউন্টে তিন কোটি টাকা রয়েছে। তখন আমার সন্দেহ হয়। পরে ওরা জানতে চায়, আমার আর কোন কোন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে। সন্দেহ হতে মোবাইল বন্ধ করে থানায় চলে যাই।
আর এক কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ওদের ফোন পেয়ে প্রেসার বেড়ে যায়, সুগারও কমে যায়। অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ওরা ভিডিও কল চালু রাখার নির্দেশ দেয়। ওরা প্রত্যেকেই পুলিশের পোশাক পড়েছিল। ওদের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে ধমকাতে থাকে। আর এক কর্মাধ্যক্ষ বলেন, প্রথমে ‘নরমাল’ কল করে একজন জানায়, সে লালবাজার থেকে বলছে। আমার আধার কার্ডের নম্বর ব্যবহার করে নাকি জঙ্গিরা সিমকার্ড তুলেছিল। এই কথা শুনে ওই ব্যক্তি পাল্টা হুমকি দেয়। তখন সে বলে, গুজরাত এটিএস কথা বলবে। কিছুক্ষণ পরই আর এক ব্যক্তি নিজেকে এনআইএ অফিসার পরিচয় দিয়ে ফোন করে। সে টাকার বিনিময়ে সবকিছু ম্যানেজ করে দেবে বলে জানায়। ওদের কথায় ঘাবড়ে যাইনি। বিষয়টি পুলিশকে জানাই।
পুলিশ জানিয়েছে, ডিজিটাল অ্যারেস্ট সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বহুদিন ধরেই প্রচার করা হচ্ছে। কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে চাইলে সরাসরি তদন্তকারীরা অভিযুক্তর বাড়িতে যায়। ভিডিও কলে কাউকে কখনই গ্রেফতার করা হয় না। প্রচারের পরও অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পড়ছে। তারা এই কায়দায় ফোন করে অতীতে অনেকেরই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের পদাধিকারীরা আর্থিক লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গিয়েছেন।