• কাদের টিকিট বাদ? কেন্দ্র ধরে পারফরম্যান্স রিভিউয়ে তৃণমূল
    বর্তমান | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: এসআইআর শেষ হলেই বিধানসভা নির্বাচনের ঘোষণা। আর তাই এখন থেকে ভোটজ্বরে তেতে উঠছে বাংলা। ঘুঁটি সাজানো শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির। আর তার থেকেও একধাপ এগিয়ে ‘টিকিটের হিসেব’ শুরু করে দিয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। একটা বিষয় স্পষ্ট—চাইলেই টিকিট মিলবে না। গতবার জিতে থাকলেও না। এক্ষেত্রে মাপকাঠি হবে স্রেফ পারফরম্যান্স। ঠিক এই কারণেই বসে গিয়েছে ‘স্ক্যানার’। প্রত্যেক বিধায়কের উপর। সেইসঙ্গে এসআইআর প্রক্রিয়ায় কোন বিধায়ক কতটা মানুষের পাশে থাকছেন, তারও পর্যালোচনা চলছে। সব মিলিয়েই তৈরি হবে মার্কশিট। আর তার ভিত্তিতে টিকিটের ভাগ্য নির্ধারণ। ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ শীর্ষক যে রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ হয়েছে, সেটাও আগামী দিনে এলাকা ধরে প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। সেদিকেও নজর রাখবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অর্থাৎ, তৃণমূল বিধায়করা কতটা দায়িত্বের সঙ্গে সেই কর্মসূচি পালন করবেন, তাও থাকবে নজরে। 

    ‘সৎ, পরিশ্রমী এবং মানুষের জন্য কাজ করবেন, এমন কর্মীই আমি চাই’ —এই বার্তা খোলা মঞ্চ থেকে এর আগেও দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সমীকরণেই নির্বাচনের আগে তৃণমূল আরও কঠোর এবং তীক্ষ্ম নজরদারিতে নেমে পড়েছে। বিধায়কদের পারফরম্যান্স বা যোগ্যতাই এবার তৃণমূলের প্রধান নজরদারির মধ্যে। গত মাসের ২৪ তারিখ দলের বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনও দাদা ধরে টিকিট পাওয়া যাবে না। শুধু পারফরম্যান্স।’ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজস্ব নেটওয়ার্ক মারফত বিধায়কদের পারফরম্যান্স নিয়ে খোঁজখবর শুরু করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে রিভিউয়ের কাজে নেমে পড়েছে তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থাও। চলছে গ্রাউন্ড সার্ভে।

    ডোমকল কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম এবং তেহট্ট কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার মৃত্যুর পর ওই দু’টি আসনে এখনও ভোট হয়নি। তৃণমূলের এখন অফিশিয়াল বিধায়ক সংখ্যা ২১৯। এছাড়া মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ হওয়ার পর অন্য দল থেকে তৃণমূলে আসা দলবদলু এমএলএর সংখ্যা ৫। দলের একটি বিশেষ সূত্রে খবর, বর্তমান কোনও তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে এলাকা থেকে গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে কি না, তার ছানবিনই প্রথমে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা হোক কিংবা ওই বিধানসভা এলাকার দলীয় কর্মী—বিধায়কের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ দেখানোর ঘটনা ঘটে থাকলে তাঁর টিকিট পাওয়া মুশকিল। দলের নাম ভাঙিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে গাড়ি-বাড়ির সীমা ছাপিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন বিধায়ক নেতৃত্বের নজরে রয়েছেন। আবার দুর্ব্যবহারের জন্য অভিনেতা বিধায়ক এবং অভিনেত্রী বিধায়কের বাদ পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূল দেখছে, দলের কোনও বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কি না। যে বা যাঁরা দলে থেকে ‘বিভীষণ’-এর ভূমিকা পালন করবেন, তাঁদের টিকিট দেবে না তৃণমূল। তবে রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এটাও বলছে, সত্তরোর্ধ্ব কোনও বিধায়ক যদি পরিশ্রমী হন, সেটাও আলাদাভাবে নজর রাখা হবে। উদাহারণ, বজবজের অশোক দেব।
  • Link to this news (বর্তমান)