এই সময়: শ্মশান হোক বা কবরস্থান— ভোটার লিস্ট থেকে মৃতদের তালিকা খুঁজতে সব জায়গার নথি খুঁড়ে বের করার দায়িত্ব ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের (ইআরও) উপরে দিল দেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সার) চলাকালীন যাতে কোনও বেনো জল না–থাকে, তার জন্য ইতিমধ্যে সাত দফা ছাঁকনি তৈরি করেছে কমিশন। বেশি করে দায়বদ্ধ করা হয়েছে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) ও বুথ লেভেল এজেন্টদের (বিএলএ)। তবে মৃত ভোটারের নাম যাতে কোনও ভাবেই লিস্টে না–থাকে, তার জন্য সবরকম নথি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। কী কী নথি দেখতে হবে, তা–ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের নির্দেশ, গত কয়েক বছরে শ্মশান, কবরস্থান, সিমেট্রিতে কত মানুষের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে, সেই ডেটা তো ইআরও–দের এক জায়গায় করে খতিয়ে দেখতে হবে। তার পাশাপাশি বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও পুরসভার ডেথ রেজিস্টার, রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক, কো–অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থার নথি, রাজ্য সরকারের ‘সমব্যথী’ প্রকল্প, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, কৃষক ভাতার তথ্যপঞ্জিও যাচাই করতে হবে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দপ্তরের এক কর্তা জানান, কেউ মারা গেলে যেমন শ্মশান–কবরস্থানে রেজিস্ট্রেশন হয়, তেমনই নির্দিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভা থেকে মৃত্যুর শংসাপত্রও নিতে হয়। আবার অনেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা বিমা করানো থাকে। সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মৃত্যু হলে তা ব্যাঙ্ক বা বিমা সংস্থাকে জানাতে হয়।
দুর্ঘটনাজনিত বিমা করানো থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার বিমার টাকা পান। অর্থাৎ মৃতদের সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত হতে এই সব প্রতিষ্ঠান থেকেও নথি সংগ্রহ করে একটা ডেটা বেস তৈরি করতে হবে ইআরও–দের এবং সেই ডেটা বেস থেকে নিজের নিজের বুথ এলাকার এনিউমারেশন যাচাই করতে হবে। মৃতের শেষকৃত্যে সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারের ‘সমব্যথী’ প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পে গত কয়েক বছরে কত পরিবার সরকারি অনুদান পেয়েছে, সেটাও দেখতে হবে ইআরও–দের। একই ভাবে দেখতে হবে, বর্তমানে কতজন বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা বা ফ্যামিলি পেনশন পাচ্ছেন এবং কতজনের ক্ষেত্রে এই সব ভাতা বন্ধ হয়েছে। এর আগেই ইআরও–দের উদ্দেশে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, একজনও মৃতের নাম লিস্টে থাকলে তার দায় নিতে হবে তাঁদেরই। ফলে আপাতত ঘুম ছোটার অবস্থা হয়েছে ইআরও–দের।
সিইও দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরও যে যে ভাবে মৃতদের ডেটা পাওয়া সম্ভব, তার সবকিছুই খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ইআরও–দের। যেমন খাদ্য দপ্তরে গত কয়েক বছরে কত রেশন কার্ড সারেন্ডার হয়েছে এবং তার কারণ কী, ফ্যামিলি পেনশনের উপভোক্তা কত— এ সবের নথিও দেখতে হবে তাঁদের। ইতিমধ্যে যে সব এনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ়ড হয়ে গিয়েছে, সেই সব ফর্ম ইআরও–দের মৃতদের ডেটাবেসের সঙ্গে ম্যাচিং করে দেখতে হবে। ম্যানুয়ালি যাচাইয়ের পাশাপাশি চলবে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ও বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে তালিকা ঝাড়াইবাছাই।
শুক্রবার দেশের ১২টি রাজ্যের সিইও–র সঙ্গে বৈঠক করেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার। তাঁর সাফ কথা, জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের (ডিইও) দায়িত্ব নিতে হবে মৃত ভোটারদের ঝাড়াইবাছাই নিশ্চিত করার জন্য। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে ভালো করে দেখে নিতে হবে, ওই তালিকায় কোনও মৃত, নিখোঁজ, শিফ্টেড বা ডুপ্লিকেট ভোটার আছে কি না। সেজন্য এ দিনই এই চার ধরনের ভূতুড়ে ভোটার খুঁজতে কমিশন ডিইও ও ইআরও স্তরে বিশেষ সফটওয়্যার চালু করেছে।
এ দিন পর্যন্ত ৭ কোটি ৬০ লক্ষের মতো এনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ়ড হয়ে গিয়েছে। নিখোঁজ ভোটারের সংখ্যা এ দিন পর্যন্ত ৫৪ লক্ষ ৬০ হাজারের মতো। এর মধ্যে মৃত ভোটারের সংখ্যা ২৩ লক্ষ ৭১ হাজার ২৩৯। এ ছাড়াও ৩১,৬১৮ জন এনিউমারেশন ফর্ম পেয়েও জমা দেননি। কমিশন সূত্রের খবর, যে সব মৃত ভোটারকে ইতিমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের এনিউমারেশন ফর্ম বিলিই হয়নি। কিন্তু তারপরেও জালিয়াতি করে কোথাও মৃত ভোটারের নাম তোলা হচ্ছে কি না, তা খুঁজে বের করতে চাইছে কমিশন। সেই কারণেই বিএলও থেকে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক— সব স্তরে কড়াকড়ি করা হচ্ছে।