এই সময়: ভোট আসতেই বঙ্গ–রাজনীতিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মন্দির–মসজিদ বিতর্ক। মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর যখন বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরির তোড়জোড় করছেন, ঠিক তখনই বিজেপি হিন্দুত্বের সুর চড়াতে শুরু করেছে। শুক্রবার রাজ্যসভার অধিবেশনে বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য দাবি করেন, মালদায় আদিনা মসজিদ যেখানে রয়েছে, সেখানেই ছিল আদিনাথ মন্দির। এই দাবির সপক্ষে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে বলেও তিনি রাজ্যসভায় উল্লেখ করেন। ভারত সরকারের কাছে তাঁর দাবি, ওই বিতর্কিত স্থানে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হোক। যাতে কোনও তথ্যপ্রমাণ নষ্ট না হয়।
এ দিকে, আগামী ৭ ডিসেম্বর, রবিবার ব্রিগেডে ‘পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’–এর আয়োজন করতে চলেছে ‘সনাতন সংস্কৃতি সংসদ’ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন। তবে এর পিছনে বিজেপি নেতারা আছেন বলেই রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি। রবিবারের অনুষ্ঠানে শমীক ভট্টাচার্য, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার–সহ রাজ্য বিজেপির সব শীর্ষ নেতা–নেত্রীর থাকার কথা। তবে মঞ্চে না–থেকে শ্রোতাদের চেয়ারেই থাকবেন তাঁরা, এমনটাই খবর।
বিজেপির রাজ্য সভাপতির চেয়ারে বসার পরেই শমীক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি দলকে উগ্র হিন্দুত্বের পথে পরিচালিত করতে চান না। কিন্তু সেই শমীকই শুক্রবার সংসদে মন্দির–মসজিদ ইস্যুতে সুর চড়ান। পরে সংসদের বাইরে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনও মন্দির–মসজিদের লড়াইয়ের কথা বলিনি সংসদে। এই লড়াই হিন্দু–মুসলমানের নয়। এ লড়াই ভারতের ইতিহাসের পুনরুদ্ধারের। সিকন্দর শাহ একজন লুটেরা। তিনি গৌড় সাম্রাজ্যের সব স্থাপত্য ধ্বংস করেছিলেন। মালদার আদিনাথ মন্দির মাটিতে গুঁড়িয়ে দিয়ে আদিনা মাসজিদ তৈরি করা হয়েছে। আজও সেখানে পদ্ম–কমল আছে। লক্ষ্মীর হাতের ছাপ আছে। গণেশের মূর্তি আছে। এটা রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তাঁর সংযোজন, ‘আমি সংসদের অধিবেশনে ভারত সরকারের কাছে আমার দাবি জানিয়েছি। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে সেখানে নিরাপত্তা আরও আঁটোসাটো করতে হবে। কারণ, মাঝেমধ্যেই দরজার কাছে থাকা গণেশের মূর্তিতে পাথর ছোড়া হচ্ছে।’ এক তৃণমূল নেতার পাল্টা বক্তব্য, ‘ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি ছাড়া বিজেপি আর কিছু বোঝে না। হুমায়ুন কবীর বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছিলেন বলে তাঁকে আমরা দল থেকে সাসপেন্ড করেছি। আর বিজেপির রাজনীতিটাই হলো সাম্প্রদায়িক বিভাজনের।’