মুর্শিদাবাদের দলীয় বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের নিলম্বনের পরে দলেই এই প্রশ্নের মুখে পড়ছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, হুমায়ুনের কাজকর্ম নিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সেই ‘পরামর্শ’ নিয়ে এখন এই আলোচনা দানা বেঁধেছে শাসকদলে। মুর্শিদাবাদের নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিরাও একাধিকবার হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বললেও নেতৃত্বের উপেক্ষা তাঁদের কাছে‘রহস্যজনক’ ঠেকেছে।
আরও একটি ভোটের মুখে হুমায়ুনকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত বিড়ম্বনার পড়েছে তৃণমূল। সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁকে নিলম্বিত করা হলেও এই অস্বস্তি দলকে কতদূর বইতে হবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে দলীয় নেতৃত্বে। কারণ যে নির্বাচনে চূড়ান্ত মেরুকরণের আশঙ্কা রয়েছে, তার আগে রাজ্যের মাটিতে হুমায়ুনের ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরির উদ্যোগ আর পাঁচটা মতবিরোধের মতো নয়। সেই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, হুমায়ুন ‘বেলাগাম’ হয়েছেন অনেকদিন আগেই। এত দিন কোনও ব্যবস্থা নিলে এখন আর তাঁর ‘দায়’ নিতে হতনা দলকে। এই প্রসঙ্গে দলের এক নেতার কথায়, ‘‘গত লোকসভা ভোটের আগেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করায় সাহস বেড়েছে।’’ সেই সূত্রেই দলের অন্দরে দেওয়া রাজ্য সভাপতির সেই পরামর্শের কথাই মনেকরছেন অনেকে।
ধারাবাহিক ‘বেচাল’ কাজকর্মের মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনের সময় চূড়ান্ত এক সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছিলেন হুমায়ুন। দলেরই একটি সভায় মুর্শিদাবাদের হিন্দু-মুসলমান বিন্যাসের উল্লেখ করে হুমকিও দেন। হিন্দুদের উদ্দেশে বলেন, তাঁরা ( মুসলমান) ৭০ শতাংশ। ৩০ শতাংশকে কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দিতে পারেন! ভোটের প্রচারে দলীয় বিধায়কের ওই মন্তব্যের পরেও তৃণমূলের নীরবতা নিয়ে এখন দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি হুমায়ুনকে নিলম্বিত করেও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে তৃণমূল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের বোকা বানানোর জন্য লোক দেখানো সাসপেন্ড হয়েছেন (হুমায়ুন)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ ও মুখোশ আলাদা। ৬ ডিসেম্বর আমরা শৌর্য দিবস পালন করব।’’
এ সবের পাশাপাশি বেশ কিছুদিন ধরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন হুমায়ুন। মাস খানেক আগে থেকে ভোটার তালিকার এসআইআর নিয়ে দল যে কর্মসূচি চালাচ্ছে, তাতেও হুমায়ুন অনুপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের বিধায়কদের অবশ্য করণীয় হিসেবে ‘ওয়াররুম’ তৈরি ও শিবির পরিদর্শনের কথা বলা হলেও তিনি তা করেননি। এমনকি পর্যালোচনা বৈঠকে তাঁর নাম করেই সে কথা জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলেও জানিয়েছেন নিলম্বিত বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল আমাকে অপমান করেছে, অসম্মান করেছে, বাবরি মসজিদ করব বলে আমাকে নিলম্বিত করেছে। তৃণমূলকে আগামী দিনে এর খেসারত দিতে হবে। ছাব্বিশের ভোটে তৃণমূল প্রাক্তন হবে।’’
এ কথা ঠিক, সংগঠন ও প্রশাসন নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় বেশ কয়েক বার সতর্ক করেছিল তৃণমূল। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘ঠিক তখনই হুমায়ুনকে বার করে দেওয়া উচিত ছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সভাপতি স্বয়ং দলে বহিষ্কারের কথা বলেছিলেন। তখন তা করা হলে আজ এই অস্বস্তি হত না।’’ তবে তিনি মেনে নিয়েছেন যে মুর্শিদাবাদে সংখ্যালঘু ভোটের কথা ভেবেই হয়তো নেতৃত্ব ভরতপুরের বিধায়কের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে সাহস করেননি। এখন বাবরি মসজিদের মতো বিষয়কে সামনে রেখে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া নিয়েও চিন্তায় পড়েছে তৃণমূল।