আর জি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে জেল হেফাজতে থাকা, সেখানকার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত ‘কাটমানি’ নিতেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল) আখতার আলি। কোর্টে জমা দেওয়া দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে এমনটাই দাবি করল সিবিআই। ওই চার্জশিটে আখতার এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শশীকান্ত চন্দক নামে এক ব্যবসায়ীকে অভিযুক্ত হিসাবে দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আদালত সূত্রের খবর, ৩৩ পাতার চার্জশিটে আখতার এবং শশীকান্তের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি তুলে ধরেছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার।
তদন্তকারী অফিসারের দাবি, হাসপাতালে নানা সংস্কারের কাজ, বিভিন্ন ক্যাফেটেরিয়া-ব্যবসা এবং চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে ছোট বরাতের দরপত্র-দুর্নীতি করা হয়েছে। সেই দুর্নীতির অঙ্ক ছিল ১০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আসগর আলির কাছ থেকে দরপত্রের বরাত দেওয়া বাবদ নগদ টাকা এবং বিভিন্ন পরিষেবা নিয়েছিলেন আখতার। সেই টাকা তিনি জমা করেছিলেন তাঁর স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। আরও দাবি, বেশ কয়েক বার সপরিবার বিদেশে যাওয়ার বিমান-খরচও আসগরের কাছ থেকে নিয়েছিলেন আখতার।
তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ‘‘কখনও ৫০ হাজার, কখনও দেড় লক্ষ টাকা আখতারের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। কিন্তু, ওই টাকার কোনও হিসাব দিতে পারেননি আখতার কিংবা তাঁর স্ত্রী।’’ দরপত্রে জালিয়াতি প্রসঙ্গে ওই অফিসার দাবি করেছেন, দরপত্র ডেকে বিভিন্ন সংস্থার নামে জাল নথি তৈরি করা হত। এর পরে সংশ্লিষ্ট নথিতে সংস্থার কর্তাদের জাল স্বাক্ষর বসিয়ে সেটি জমা দেওয়া হত। শেষে একটি সংস্থাকে বেছে নিয়ে নিজের লোকেদের মারফত ওই কাজ করত আখতার। জাল নথি তৈরি এবং তাতে স্বাক্ষর করত শশীকান্ত। তদন্তকারীদের দাবি, ওই সব নথি এবং সইয়ের ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই যে শশীকান্ত জড়িত ছিল, সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে ফরেন্সিক রিপোর্টে।
উল্লেখ্য, আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসা-বর্জ্য বিক্রি নিয়ে বড় অঙ্কের দুর্নীতি হয়েছে বলে সন্দীপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন আখতারই। কিন্তু মামলার তদন্তকারী অফিসারের দাবি, হাসপাতাল থেকে ওই বর্জ্য বিক্রির কোনও নথি বা তথ্য পাওয়া যায়নি। পুরো প্রক্রিয়াটিতে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল রাজ্য প্রশাসনকে। তদন্তে এ-ও উঠে এসেছে, হাসপাতালের পুলিশ মর্গে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় দেহ সন্দীপের নির্দেশে চিকিৎসকদের পরীক্ষামূলক কাজে ব্যবহার করা হত। অথচ, এর জন্য পুলিশের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হত না।
তদন্তকারী অফিসারের দাবি, হাসপাতালের মর্গের যাবতীয় নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী মর্গের পরিকাঠামো নেই। সেখানে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়। তবে, তদন্তে দেহ পাচারের কোনও তথ্য উঠে আসেনি।
সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘মর্গে মৃতদেহের গাদা তৈরি করা হয়েছিল। যাতে সেখান থেকে দু’-একটি অজ্ঞাতপরিচয় দেহ এ-দিক ও-দিক হয়ে গেলেও তা কোনও ভাবে ধরা না পড়ে।’’
সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত বলেন, ‘‘আখতার এবং শশীকান্তের তৈরি করা জাল নথি ও সেই সব নথিতে কী ভাবে স্বাক্ষর জাল করা হয়েছিল, তার ফরেন্সিক রিপোর্ট-সহ সমস্ত তথ্যপ্রমাণ চার্জশিটের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে।’’