‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ কী, কী হয় সেখানে— বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাধানগর সারদাপল্লির গঙ্গাধর পরামানিককে দেখলেই এমন নানা প্রশ্ন করছে লোকে। আর বুক কাঁপছে গঙ্গাধরের। মনে পড়ছে, সে ক্যাম্প থেকে পালানোর চেষ্টা করায় পুলিশের লাথি।
ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) পরে, যাঁদের নাম বাদ যাবে তাঁদের গন্তব্য ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’, জল্পনা ছড়িয়েছে লোকমুখে। কমিশন সে কথা মানেনি। কিন্তু ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ কী, গঙ্গাধরের মতো আর ক’জন জানেন! চার বছর অসমের গোয়ালাপাড়ার ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এ কাটানোর স্মৃতি এখনও তাড়া করে তাঁকে।
বছর বাইশ আগে বাবা-মাকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন গঙ্গাধর। তখন তিনি সতেরো। কিছু না ভেবেই ট্রেনে উঠে চলে যান গুয়াহাটি। কাজ পান হোটেলে। বাড়িতে আর যোগাযোগ করেননি। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু অসমে যখন এনআরসি-পর্ব শুরু হয়, তখন ২০১৭ সালে সরকারি নথি দেখাতে না পারায় সেখানকার পুলিশ গঙ্গাধরকে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এ পাঠায়। দাবি, সেখানে নিয়মিত অত্যাচারে তিনি ভুলে যান পরিচয়। পরে, এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহচর্যে স্মৃতি কিছুটা ফেরে। তাদের উদ্যোগে ২০২১ সালে বাড়ি ফেরেন তিনি।
এখন গঙ্গাধরের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড হয়েছে। কাজ পেয়েছেন গ্রামের মিষ্টির দোকানে। কিন্তু এসআইআর-পর্ব ফের তাঁকে আতঙ্কের স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে। বছর ঊনচল্লিশের গঙ্গাধরের কথায়, ‘‘বাবা-মা মারা গিয়েছেন। তাঁদের ভোটার কার্ডও আর নেই। এসআইআর-এর ফর্ম পূরণের জন্য ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পূর্বপুরুষদের তথ্য কোথা থেকে পাব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। যাদের কাছে সে সব তথ্য নেই তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে বলে লোকজন বলাবলি করায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’ দোকানের মালিক বাপ্পা লায়েক অবশ্য জানালেন, পরে সব তথ্য জোগাড় করে গঙ্গাধরের ফর্ম জমা করা হয়েছে।
তবু ভয় পুরোপুরি কাটেনি গঙ্গাধরের। বলেন, ‘‘পথেঘাটে লোকে আমাকে দেখলেই, ডিটেনশন ক্যাম্পে কী হয়, জানতে চাইছে। কেউ কেউ আমাকে ফের ক্যাম্পে পাঠানো হবে বলে ঠাট্টাও করছে।’’ স্মৃতি জাগিয়ে গঙ্গাধর বলে চলেন, ‘‘ভোটার কার্ড, আধার কার্ড না থাকায় অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি সন্দেহে আমাকে চারটে বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। ছোট জায়গায় ঠাসাঠাসি করে রাখা হত। এক বার পালানোর চেষ্টা করায় লাথি মেরে পুলিশ দাঁত ভেঙে দেয়।’’
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “গঙ্গাধরের নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় নেই। ওঁকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ারচেষ্টা হবে।’’