• পরিযায়ী ‘ভোটার রক্ষা’য় বিশেষ নজর তৃণমূলেরই
    আনন্দবাজার | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ভিন্ রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ অব্যাহত। রাজনৈতিক স্তরে সেই অভিযোগ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিযায়ীদের নিজের রাজ্যে ফেরার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি ফেরত এলে তাঁদের জন্য চালু হয়েছে ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প। বাইরের রাজ্যে বাড়তি রোজগারের সুযোগ ছেড়ে পরিযায়ীরা ফিরতে চান কি না, সেই প্রশ্নে বিতর্ক থাকলেও ভোটার তালিকায় তাঁদের ‘ঘরে ফেরা’র বন্দোবস্ত করতে ত্রুটি রাখছে না রাজ্যের শাসক দল!

    ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশ‌োধন (এসআইআর) পর্বে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক স্তরে নির্দেশ জারি হয়েছে পরিযায়ীদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার। এখনও পর্যন্ত জেলাভিত্তিক এনুমারেশন ফর্ম জমা হওয়ার যা হিসেব, তাতে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ীদের গণনা-পত্রও ধরা রয়েছে। কারণ, এলাকায় না-থাকার কারণে পরিযায়ীদের গণনা-পত্র যদি ফেরত আসত, তা হলে স্থানান্তরিত ভোটারের সংখ্যা আরও বেশি হত। মৃত এবং এক ঠিকানা থেকে অন্য ঠিকানায় উঠে যাওয়া ভোটার বাদ দিলে গণনা-পত্র নিয়ে গিয়ে হদিস মেলেনি, এমন ভোটারের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৪২ হাজারের কিছু বেশি। তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলায় জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের লোকজন যাতে তাঁদের হয়ে গণনা-পত্রে সই করে দেন, ঘুরে ঘুরে তা ‘নিশ্চিত’ করেছেন দলের বুথ লেভল এজেন্টরা (বিএলএ)। ভিন্ রাজ্যে কাজের জায়গায় থেকে অনলাইনেও আবেদন করেছেন পরিযায়ীদের একাংশ। গণনা-পত্র পূরণের সময়ে পরিযায়ীদের পরিবারের কাছে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে অন্তত শাসক দলের ধারেকাছে নেই বিরোধী বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেসের বিএলএ-রা।

    পরিযায়ী-অধ্যুষিত দুই জেলা মালদহ ও মুর্শিদাবাদ সফরে এসে এই বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা। নির্দেশ দিয়েছেন, পরিযায়ীদের মধ্যে কেউ যদি অন্যত্র ভোটার তালিকায় নাম তুলে থাকেন, সেই তথ্য জেনে যেন সেখান থেকে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করানো হয়। নইলে একাধিক জায়গায় নাম থাকার কারণে সমস্যায় পড়তে হবে। তারই পাশাপাশি, শুনানি-পর্বের সময়ে প্রয়োজন মতো পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করার নির্দেশ ফের দিয়েছেন।

    এসআইআর-এর কাজ দেখভালের জন্য তৃণমূলের তরফে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যসভার দুই সাংসদ সামিরুল ইসলাম ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জেলায় থেকে বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরে তাঁরা গণনা-পত্র জমার হিসেব রেখেছেন। পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল এবং আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রতের বক্তব্য, গণনা-পত্র জমা দেওয়ার কাজে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে সব রকম সহায়তা করা হয়েছে। শুনানির সময়েও সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্ব ও বিধায়কদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। বিহারে যেমন এসআইআর-এর প্রথম ধাপেই ‘পাকাপাকি ভাবে স্থানান্তরিত’ বলে বহুসংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

    বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য অভিযোগ, নানা জায়গায় ইআরও এবং বিএলও-দের ‘চাপ’ দিয়ে জোর করে নাম তালিকায় রাখার চেষ্টা করছে শাসক দল। তার মধ্যে অনুপস্থিত পরিযায়ীদের ফর্মও আছে। মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাংসদ খলিলুর রহমান অবশ্য বলছেন, ‘‘পরিযায়ীরা যাতে অন্যায় ভাবে বাদ না যান, তার জন্য আমরা সহযোগিতা করেছি। অল্প কিছু ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের জানানো হয়েছে। শুনানি-পর্বে হাতে আরও একটু সময় থাকবে। তখন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থাও আমরা করব।’’ পক্ষান্তরে, মুর্শিদাবাদে জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব মানছেন, সমস্যায় পড়লে পরিযায়ীদের যথাসাধ্য সাহায্য প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী করলেও এসআইআর-এর কাজে তাঁদের ফিরিয়ে এনে সহায়তা করার মতো অর্থ বা লোকবল তাঁদের নেই।

    ভোটের আগে পরিযায়ী ‘ভোটার রক্ষা’য় অনেক এগিয়ে গিয়েছে শাসক দলই!
  • Link to this news (আনন্দবাজার)