• স্বাস্থ্য-দুর্নীতিতে এ বার ‘কানে’ টান
    আনন্দবাজার | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে এ বার ‘কান’ নিয়ে টানাটানি!

    রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পিপিপি মডেলে চলা কানের পরীক্ষাকেন্দ্রে মনগড়া রিপোর্ট তৈরি, শ্রবণযন্ত্রের প্রয়োজন না থাকলেও রোগীকে চড়া দামে যন্ত্র কিনতে বাধ্য করা এবং সরকারি ছাপ মারা ‘নট ফর সেল’ শ্রবণযন্ত্র বেসরকারি জায়গা থেকে সরকারি হাসপাতালের রোগীকে কেনানোর মতো অসংখ্য গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা হাই কোর্টে এ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে।

    রাজ্য জুড়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কানের বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে পিপিপি মডেলে চলা কেন্দ্রে। বেসরকারি সংস্থা এবং কিছু সরকারি চিকিৎসক মিলে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ফলাও দুর্নীতির কারবার খুলে বসেছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছে অডিয়োলজিস্ট ও স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্টদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’-র পশ্চিমবঙ্গ শাখা। দাবি করা হয়েছে, পিপিপি মডেলে কানের পরীক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক দুর্নীতির কথা ২০২৩ সাল থেকে স্বাস্থ্যকর্তাদের জানানো শুরু করেছিল তারা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চলতি বছর জুন নাগাদ এ নিয়ে তদন্ত কমিটিও তৈরি করে। এনআরএস তাদের রিপোর্টে স্বীকার করে, ওই হাসপাতালে কানের পরীক্ষায় নিযুক্ত একাধিক কর্মীর ওই কাজ করার কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতাই নেই। কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কোনও তদন্ত রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করেনি বলে অভিযোগ। গত অগস্টে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে ওই সংগঠন। আদালত স্বাস্থ্য দফতরকে অভিযোগের নিরিখে যাবতীয় রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে।

    মামলাকারীদের আইনজীবীদের সূত্রে দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২৩ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে বিভিন্ন রোগীর শ্রবণ পরীক্ষার রিপোর্ট হুবহু এক! এর ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত। যেমন দেখা গিয়েছে, ২০২১ সালে ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আবদুল্লা শেখের রিপোর্ট, ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে হওয়া স্নেহা মাজির রিপোর্ট, ২০২৪ সালের ৬ অগস্ট নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে রোগী নেহা দাসের রিপোর্ট, ২০২৫ সালের ২৫ এপ্রিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে এক রোগীর রিপোর্ট পুরোপুরি এক! শিশুদের অন্তঃকর্ণের অটোঅ্যাকোস্টিক এমিশন টেস্ট-এর ক্ষেত্রেও বর্ধমান, মেদিনীপুর, এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যালের মতো বিভিন্ন হাসপাতালে অসংখ্য শিশু রোগীর রিপোর্ট হুবহু এক! ইএনটি বিশেষজ্ঞদের মতে, যা হওয়া অসম্ভব। অথচ, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, শ্রবণযন্ত্র দেওয়া— সবই হয়েছে। যে শ্রবণযন্ত্র সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে রেফার করা রোগীকে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি সংস্থা থেকে কেনানো হচ্ছে, তা সরকার থেকে সরবরাহ করা শ্রবণযন্ত্র, যা বিক্রি করার কথাই নয়।

    সরকারি ছাপ মারা শ্রবণযন্ত্রগুলি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি সংস্থার কাছে আসছে কী ভাবে? চলতি বছর ২ মে অভিযোগকারী সংস্থা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়ে দাবি করে, এগুলি আসলে পূর্ব রেল ও কেন্দ্রের নানা হাসপাতালে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সরবরাহ করা শ্রবণযন্ত্র। যেগুলি একটি চক্রের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে আসছে। ও তারা রাজ্য সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভুল রিপোর্ট দিয়ে শ্রবণ প্রতিবন্ধী প্রমাণ করে সরকারি যন্ত্র চড়া দামে কেনাচ্ছে।

    এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি এখন বিচারাধীন, বিস্তারিত বলা যাবে না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)