ইন্ডিগো উড়ান সংস্থার পরিষেবায় বিভ্রাটের ফলে বিপুল হারে বেড়েছে বিমান ভাড়া। বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকে পড়েছেন যাত্রীরা। বস্তুত এখন দিল্লি-কলকাতা পথের উড়ানের ভাড়া দিল্লি-লন্ডন বা দিল্লি-প্যারিস পথের চেয়ে বেশি। ১০-১৫ ডিসেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সের।
উড়ান পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, আজ দিল্লি-কলকাতা পথের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার টাকায়। ‘রাউন্ড ট্রিপ’ অর্থাৎ একই সংস্থার উড়ানে ওই পথে এসে ফের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগামিকাল খরচ পড়বে ৮৫ হাজার টাকা। অন্য দিকে আজ দিল্লি-লন্ডন পথে সবচেয়ে কম ভাড়ার উড়ানে খরচ পড়ছে ২৫ হাজার টাকা। অন্য দিকে দিল্লি-প্যারিস পথেও ওই ভাড়া বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা। বিদেশের এই দু’টি শহরে ‘রাউন্ড ট্রিপ’-এর খরচ ৬০ হাজার টাকার কম। আজ বিকেল পর্যন্ত অন্য বিমান সংস্থার উড়ানে দিল্লি-মুম্বই পথে ৫০ হাজার, দিল্লি-জয়পুর পথে ৭০ হাজার, দিল্লি-কলকাতা পথে ৪৫ হাজার ও দিল্লি-হায়দরাবাদ পথে ১ লক্ষ টাকা ভাড়া দাঁড়িয়েছে। আজ দিল্লি-মুম্বই ও দিল্লি-বেঙ্গালুরু পথে কোনও সরাসরি উড়ানে সওয়ার হওয়ার উপায় নেই যাত্রীদের।
গত দু’দিনের তুলনায় শুক্রবার ইন্ডিগোর উড়ানের সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত ইন্ডিগোর সমস্ত উড়ান বাতিল করা হয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে অন্য সংস্থাগুলির উড়ান। অন্যান্য উড়ান সংস্থার পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও একমাত্র ইন্ডিগোর উড়ান বন্ধ থাকছে বলে খবর। ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সের কথায়, ‘‘আজ ১ হাজার উড়ান বাতিল হয়েছে। কালও কয়েকশোউড়ান বাতিল হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’’ ইন্ডিগোর তরফে জানানো হয়েছে, বাতিল উড়ানের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ভাবে (অটোম্যাটিক রিফান্ড) টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে। ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে উড়ানে বুকিং থাকলে সেই বুকিং বাতিল বা সংস্থার অন্য উড়ানে বুকিং করা হলে বাড়তি ভাড়া দিতে হবে না। আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য হোটেল ও গাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিমানবন্দরেও যাত্রীদের জন্য খাবার পৌঁছনোর চেষ্টা করছে সংস্থা। প্রবীণ নাগরিকেরা যাতে লাউঞ্জে বিশ্রাম নিতে পারেন সে জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে ইন্ডিগো।
রাতে রেল মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয় যে, যাত্রীদের সুবিধার জন্য দেশের ৩৭টি প্রিমিয়াম ট্রেনে ১১৬টি বাড়তি কামরা জুড়ে চালানো হচ্ছে।
চলতি মাসে বিমানচালক এবং কর্মীদের ক্ষেত্রে ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন’-এর নতুন বিধি কার্যকর হওয়ার ফলে কর্মী সঙ্কট দেখা দিয়েছে ইন্ডিগোয়। ওই বিধির উদ্দেশ্য বিমানচালকদের বিশ্রামের সময় বাড়ানো। বিমানচালকের সংখ্যার হিসাবে যে তাদের ভুল হয়েছিল সে কথা মেনে নিয়েছে ইন্ডিগো। ওই বিধি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিমানমন্ত্রী কে রামমোহন নায়ডু জানিয়েছেন, ‘‘সময়ে উড়ান সংক্রান্ত খবর সব যাত্রীকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উড়ান সংস্থাগুলিকে। বাতিল উড়ানের ভাড়া স্বয়ংক্রিয় ভাবে (অটোম্যাটিক রিফান্ড) ফেরত দেওয়া হবে। বিমান সংস্থাগুলিকে আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে প্রবীণ ও বিশেষ ভাবে সক্ষম যাত্রীদের। যাত্রীদের উড়ান সংক্রান্ত খবরের দিকে নজর রাখতে অনুরোধ করেছে সংস্থা। goindigo.in/6eskai-এ ইন্ডিগোর চ্যাটবট উড়ানের খবর, টাকা ফেরত ও ফের উড়ানের বুকিংয়ে সাহায্য করবে।
সঙ্কটের জেরে সামনে এসেছে যাত্রী দুর্দশার করুণ চিত্র। বাবার অস্থি বিসর্জনের জন্য বেঙ্গালুরু থেকে হরিদ্বার যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল নমিতার। কিন্তু আজ আচমকা ইন্ডিগোর উড়ান বাতিল হওয়ায় দিল্লিই পৌঁছতে পারেননি তিনি। বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে নমিতা বলছিলেন, ‘‘আমাকে দিল্লি থেকে দেহরাদূনের উড়ান ধরতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে হরিদ্বার।’’ নমিতা জানান, উড়ান বাতিল নিয়ে কোনও আগাম বিজ্ঞপ্তি দেয়নি ইন্ডিগো। নমিতার কথায়, “কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করেনি। বলছে অন্য সংস্থার উড়ানের টিকিট বুক করুন। সেগুলিতে ভাড়া ৬০ হাজার টাকা। অত ভাড়া দিতে পারব না। তাই হরিদ্বারও যেতে পারব না।” সরকারের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘হস্তক্ষেপ করুন। গঙ্গায় আমার বাবার অস্থি বিসর্জন গুরুত্বপূর্ণ।’’
বিপাকে পড়া যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লিতে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার সাইমন উংও। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে এক হাইকমিশন কর্মীর বিয়ের প্রীতিভোজে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সমাজমাধ্যমে সাইমন লেখেন, ‘‘উড়ান বাতিলের ফলে আটকে পড়া হাজার হাজার যাত্রীর মধ্যে আমিও আছি। আমার দেওঘরের উড়ান বাতিল হয়েছে। হাইকমিশনের কর্মীর বিয়েতে যোগ দিতে পারলাম না বলে ক্ষমা চাইছি। কিছু বলার নেই।’’