দু’মাসের মধ্যেই তার মাধ্যমিক পরীক্ষা। এই সময়টা চূড়ান্ত প্রস্তুতির। কিন্তু প্রস্তুতি তো দূর, সে বুঝেই উঠতে পারছে না, মাধ্যমিক সে দিতে পারবে কিনা। দিলেও, কোথা থেকে দেবে? কারণ, তার হঠাৎ বদলে যাওয়া জীবন। বাবাকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে যে মাকেই! ফলে মুচিপাড়ার বাসিন্দা ওই দম্পতির একমাত্র ছেলে, ১৫ বছরের কিশোরের এখন ঠাঁই হয়েছে সরকারি হোমে। সূত্রের খবর, মামা-দিদিমা থাকলেও এখনও পর্যন্ত তাঁরা কেউই আসেননি বলে ওই হোম সূত্রের খবর। যদিও সমাজকল্যাণ দফতরের শিশু কল্যাণ সমিতি বা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির ওই হোমের তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছে, কিশোরের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তার বইগুলি বাড়ি থেকে আনানোর চেষ্টা চলছে।
কয়েক মাস আগে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ট্যাংরার এক কিশোরের। পরিবারের মহিলাদের খুন করে তাকে নিয়ে আত্মহত্যা করতে বেরিয়েছিলেন তার বাবা এবং কাকু। কিন্তু কোনও ক্রমে তারা বেঁচে যান। বাবা এবং কাকু খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ায় পুলিশ ওই কিশোরকে হোমে পাঠায়।
মুচিপাড়ার এই ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার রাতে। ওই কিশোরের বাবার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় মুচিপাড়া থানা এলাকার বাড়ি থেকে। কিশোরের মা স্বামীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখান থেকে পুলিশে জানানোর তোড়জোড় শুরু হলে তিনি স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। পুলিশ জানতে পেরে কিশোরের বাবা অশোককুমার দাসকে এন আর এস হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরেই কিশোরের মা সর্বাণী দাসকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে জানা যায়, ওই দম্পতি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ভাড়ায় নেওয়া দু’টি ঘরের মধ্যে একটি নিজেরা ভাড়া দিতে পারেন কিনা, তা নিয়ে দম্পতির মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃত সর্বাণীর বক্তব্য, তিনি স্বামীকে মেরে ফেলতে চাননি। বচসার মধ্যে অঘটন ঘটে গিয়েছে। সর্বাণীকে এ দিন দ্বিতীয় অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের (এসিজেএম ২) আদালত ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘ঘটনার পুনর্নির্মাণ এবং অভিযুক্তকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর আর্জি জানানো হয়েছিল। আদালত মঞ্জুর করেছে।’’
আদালত সূত্রের খবর, সর্বাণীকে জেরা করে খুনে ব্যবহৃত ছুরি, রক্তমাখা জামা ও বোতল উদ্ধার হয়েছে। এ দিকে, দম্পতির একমাত্র কিশোর পুত্রকে কোনও আত্মীয়ই রাখতে এগিয়ে আসেননি। পুলিশের দাবি, সর্বাণীও জানিয়েছেন, তিনি ছেলেকে তাঁর মা এবং ভাইয়ের কাছে পাঠাতে রাজি নন। এর পরে খবর যায় সমাজকল্যাণ দফতরের শিশু কল্যাণ সমিতি বা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে। তাকে ওই কমিটির হোমেই রাখা হয়েছে।
কমিটির চেয়ারপার্সন মহুয়া শূর রায় বলেন, ‘‘ছেলেটি ভাল আঁকে। খারাপ লাগছে, সামনে ওর মাধ্যমিক। বইপত্র আনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আত্মীয় কেউ ওকে রাখতে রাজি হন কিনা, দেখা হবে। কেউ এগিয়ে না এলে সরকার দায়িত্ব নেবে।’’