• বুক কাঁপানো বিয়ের শোভাযাত্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে গাড়ি
    আনন্দবাজার | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • পর পর বাজি ফাটছে সাউন্ড বক্সের বুক কাঁপানো আওয়াজের সঙ্গেই। বাজির সলতেয় আগুন ধরিয়ে নাচতে থাকা ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গেলেন এক যুবক। সেই ভিড় যে লরির পিছনে চলেছে, সেটির গায়ে নানা কায়দার আলো। চার দিকে বাঁধা বিশাল মাপের কয়েকটি সাউন্ড বক্স! লরিতে দাঁড়িয়ে গান চালাচ্ছেন এক যুবক। আলোর ঝলকানির মধ্যে কার্যত রাস্তায় শুয়ে পড়ে নেচে চলেছেন ভিড়ের লোকজন।

    বিসর্জনের দৃশ্য নয়, এটি বিয়ের শোভাযাত্রা। তার জেরেই রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা উত্তর কলকাতার বেশ কিছু রাস্তার। সন্ধ্যার পরে শোভাযাত্রার চাপে গাড়ির চাকা কার্যত নড়ছেই না বলে অভিযোগ। বাস বা অটোয় উঠে আটকে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদেরও দেখা যাচ্ছে না। কোনও পুলিশকর্মী থাকলেও তিনি বলছেন, ‘‘বিয়ের জন্য যাচ্ছে, বন্ধ করাব কী করে!’’ রাতের দিকে রাস্তায় পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী না থাকার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নও। ভুক্তভোগীদের দাবি, পুলিশের বদলে ঘুরছেন বিয়েবাড়ির ভাড়া করা ‘বাউন্সার’। যাঁরা যানজট সামলানোর নামে গাড়ি দাঁড় করিয়েই রাখছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে জুটছে হেনস্থা। এমনকি, মারধরও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘দিনের পর দিন এমন ঘটনা পুলিশের নজরে পড়ছে না কেন?’’

    এমনিতে রাস্তায় শোভাযাত্রার জন্য পুলিশের অনুমতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিয়ের শোভাযাত্রার জন্য কোথাওই অনুমতি নেওয়ার চল রয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না পুলিশকর্মীরাও। এর মধ্যেই সন্ধ্যার পরে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে শোভাবাজার থেকে হাতিবাগান হয়ে গ্রে স্ট্রিটের অংশে। এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ‘‘শোভাবাজারে নেমে সল্টলেকে যেতে হয় আমায়। প্রায়ই আটকে পড়ছি। বিয়ের দিনগুলিতে এমন শোভাযাত্রা বেরোচ্ছে যে, বাসের চাকা নড়ার উপায় থাকছে না।’’ আর এক ভুক্তভোগীর দাবি, ‘‘তীব্র আলোর সঙ্গে কান ফাটানো আওয়াজের বাজনা নিয়ে নাচ, তারও পরে ডিজে বক্সের আওয়াজ। এর মধ্যেই বাজি ফাটানো চলছে। বাস বা গাড়ির দিকে ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ বৃহস্পতিবার এমনই বাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করেন এক অটোযাত্রী। তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

    হাতিবাগানের একটি অনুষ্ঠানবাড়ি সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শাশ্বত বসু আবার বললেন, ‘‘এমন বিয়ে আগে দেখিনি। এলাকায় বহু প্রবীণ থাকেন। বাজি আর সাউন্ড বক্সের দাপটে তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।’’ এলাকাটি কলকাতা পুলিশের বড়তলা থানার অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশকর্মীদের দাবি, এমন এক শোভাযাত্রা সম্প্রতি তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি কেন? উত্তর মেলে না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)