• প্রাক্তন রেজিস্ট্রারই লিপ্ত দুর্নীতিতে, মামলা যোগ কাউন্সিলের সভাপতির
    আনন্দবাজার | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • যোগ চিকিৎসক হিসেবে ২৪ জনকে অবৈধ ভাবে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কাউন্সিল অব যোগ অ্যান্ড নেচারোপ্যাথি’-র প্রাক্তন রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে এমনই দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই এফআইআর দায়ের করেছেন খোদ কাউন্সিল সভাপতি!

    রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। শাসকদলেরই প্রভাবশালী গোষ্ঠী বা নেতার ঘনিষ্ঠেরা দিনের পর দিন স্বাস্থ্যে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে চলেছেন বলে অভিযোগ বিরোধী চিকিৎসক সংগঠনগুলির। তবে এ বার বিরোধীরা নন, যোগ অ্যান্ড নেচারোপ্যাথি কাউন্সিলের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার শুভ্র ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে রেজিস্ট্রেশন পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন সভাপতি তুষার শীল। গত ১৪ নভেম্বর বিধাননগর উত্তর থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

    জানা যাচ্ছে, তুষারের অভিযোগ, কোনও পরীক্ষা ছাড়াই ১৯ জনকে যোগ চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচ জনকে রাজ্য যোগ ও নেচারোপ্যাথি অ্যাক্ট-২০১০ এবং রুলস্-২০১৫ অমান্য করে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। তুষার বলেন, ‘‘যোগ ও নেচারোপ্যাথিকে রাজ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। এ ছাড়া অন্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’’ সূত্রের খবর, ওই ১৯ জন ২০২৩-এর ১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা দিয়েছিলেন বলে নথিতে উল্লেখ করেছিলেন শুভ্র।

    সূত্রের খবর, গত বছরের অগস্টে নতুন রেজিস্ট্রার হিসেবে জাহাঙ্গির মোল্লা যোগ দেওয়ার পরে তাঁর কাছে তুষার জানতে চান, আদৌ ওই দিন পরীক্ষা হয়েছিল কিনা? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের বিশেষ সচিবও কয়েক জনের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। মাস তিনেক তদন্ত চালান নতুন রেজিস্ট্রার। কাউন্সিলের অন্দরের খবর, কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, ২০২৩-এর ১ সেপ্টেম্বর কোনও পরীক্ষাই হয়নি! পরীক্ষার্থী হিসেবে ওই ১৯ জনের আবেদনের যে নথি কাউন্সিলের কাছে রয়েছে, তাতেও বিস্তর অসঙ্গতি। কারও অভিজ্ঞতার শংসাপত্র নেই বলেও অভিযোগ।

    সূত্রের আরও খবর, ২০২৪-এর জানুয়ারিতে পর পর দু’দিন পরীক্ষা হয়েছিল। তাতে অন্য ৪০ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে মাত্র ছ’জন পাশ করেছেন বলে জানানো হয়েছিল। যাঁদের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত পাঁচ জনের পরীক্ষার নথিতেও একাধিক অনিয়ম রয়েছে বলে তদন্তে প্রকাশ।

    এর পরেই ওই সব রেজিস্ট্রেশন অবৈধ ঘোষণা করে কাউন্সিল। গত এপ্রিলে কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন ওই ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জন। আদালতের নির্দেশ মেনে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা করে বসে কাউন্সিল ব্যাখ্যা দেয়, কেন তাঁদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল বা অবৈধ বলা হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয়। জুলাইয়ে একটি যুক্তিসঙ্গত আদেশনামা জারি করে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিষয়টি পুনরায় জানিয়ে দেন রেজিস্ট্রার।

    সব অভিযোগ অস্বীকার করে শুভ্র বলেন, ‘‘কোনও অনৈতিক কাজ করিনি। তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তবে মামলার কোনও কাগজ হাতে পাইনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অবসরের পরেও পুনর্বহাল হয়েছিলাম। সেই মেয়াদও শেষ হয়েছে। এত দিন সভাপতি কী করছিলেন? তা ছাড়া নিয়মমাফিক রেজিস্ট্রারের এফআইআর করার কথা। সেটা সভাপতি করলেন কী ভাবে?’’

    মুখে কুলুপ এঁটেছেন রেজিস্ট্রারও! বিরোধী চিকিৎসক শিবিরের প্রশ্ন, ‘‘সর্ষের মধ্যেই ভূত নেই তো! তাই কি প্রকাশ্যে বলতে আপত্তি?’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)