শ্যামগোপাল রায়
কানে ফোন চেপে মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া ক্রমশ বাড়ছে রাজ্যে। সচেতনতামূলক প্রচার যতই হোক, বেড়ে চলেছে চালকদের এই প্রবণতা। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যু। পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, ২০২৪-এ কানে মোবাইল নিয়ে বাইক চালানোর কেস ছিল ২২,৩৪০টি। কিন্তু ২০২৫-এর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই সংখ্যা লাফিয়ে হয়েছে ৫১,২৯৬! লাগাতার প্রচারের পরেও চালকদের এই প্রবণতায় শিউরে উঠছেন পুলিশ এবং পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা।
তাঁদের দাবি, মোবাইল ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু অথবা ভয়াবহ শারীরিক ক্ষতি হয় চালক এবং আরোহীর। তার পরেও সচেতন হচ্ছেন না বাইক-চালকদের অনেকেই। রাজ্য পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তার কথায়, 'অচেনা রাস্তায় সবাই সতর্ক থাকেন। কিন্তু চেনা রাস্তায় চালকদের মধ্যে বাড়তি আত্মবিশ্বাসে কানে ফোন রেখে বাইক চালানোর প্রবণতা বেশি। দৈনন্দিন বাজার-হাট বা ছোটখাটো কাজে বেরোলে মানুষ অন্যমনস্ক থাকেন। বার বার ফোন আসে আর সেই ফোনই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।'
রাস্তায় ফোন ব্যবহারের প্রবণতাকে এখন বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখছে প্রশাসন। পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের মতে, কানে ফোন নিয়ে মোটরবাইক চালানোর ফলে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। যার জেরে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায় অনেকটাই। এই প্রবণতার জেরে চালকরা যেমন নিজেরা দুর্ঘটনার মুখে পড়েন, তেমনই নিরীহ পথচারীও মারা যাচ্ছেন। এমন নজির প্রচুর। কানে ফোন নিয়ে বাইক চালালে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। অনেকেরই অভিযোগ, বড় শহরে পুলিশ তবুও কানে ফোন নিয়ে বাইক চালালে পদক্ষেপ করে। ছোট শহর বা গ্রামাঞ্চলে আইনের তেমন প্রয়োগই নেই।
আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা মনে করেন, 'যে ভাবে কানে ফোন নিয়ে বাইক চালানোর প্রবণতা বাড়ছে, সে তুলনায় ফাইন করা হচ্ছে অনেক কম।' আরও বেশি সংখ্যক চালককে জরিমানা করার পাশাপাশি জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোরও দাবি উঠেছে। দুর্ঘটনায় রাশ টানতে সম্প্রতি পুলিশ ও পরিবহণ দপ্তরের যৌথ বৈঠকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহণ দপ্তরের পক্ষ থেকে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে, কানে ফোন নিয়ে কাউকে বাইক চালাতে দেখলেই আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনও অজুহাতেই মোটরবাইক চালককে ছাড় দেওয়া যাবে না। কানে ফোন নিয়ে বাইক চালালে কী ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়ে প্রচারও আরও জোরদার করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, 'আমাদের তরফে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাইক-চালকদেরও বুঝতে হবে ফোন ধরার থেকে জীবনটা অনেক দামি।'